কলকাতা: হরিদেবপুর কাণ্ডে প্রথম থেকেই সরব হয়েছিলেন এলাকার কাউন্সিলর রত্না শূর। সরাসরি তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের নিকাশি বিভাগের দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি। দাবি জানিয়েছিলেন পূর্ণাঙ্গ তদঙ্গের।
সোমবার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিস্ফোরক প্রশ্ন তোলেন রত্নাদেবী। জানান, আড়াই দিনের মতো জল জমে রয়েছে হেলদোল নেই পুরসভার। অথচ কালকের মর্মান্তিক ঘটনার পর আজ সকালেই জল নেমে গেল। তিনি বলেন, ‘জল জমা এখানে দীর্ঘদিনের সমস্যা। এটাই বড় দুঃখের যে কালকে এই ঘটনা পর তিনটে পাম্প লাগিয়ে জল নামিয়ে দিল। কনট্র্যাক্টরদের বারবার বলেছিলাম। পাম্পগুলো তৈরি রাখুন। অন্যান্যবার বর্ষা আসার আগেই আমি যে করেই হোক রেডি করে রাখি। ঝগড়া করে হলেও অর্ডার হয়। গতকালও কনট্র্যাক্টরদের বলছিলাম পাম্পগুলো চালান। কিন্তু তাঁরা বলছেন এখনও অর্ডার দেয়নি আমাদের।’ এরপর নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘কী বলব আর নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে! এখানে সিইএসসি-র লাইন আন্ডারগ্রাউন্ড। কয়েকদিন আগে বিদ্যুতের ফল্ট হওয়ার কারণে খোঁড়াখুড়ি চলছিল। এই ঘটনার বড় তদন্ত হওয়া দরকার।’
রত্না শূরের দাবি, টেলিফোনের এই পোস্টগুলি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। জরুরি ভিত্তিতে এই পোস্টগুলির উপর লাইন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই একাধিক বৈদ্যুতিক তার জট পাকানো অবস্থায় ছিল।কয়েকদিন আগে বিদ্যুতের ফল্ট হওয়ার কারণে খোঁড়াখুড়ি করেছিল সিইএসসি। তার জেরে কোনও তার খোলা অবস্থায় রয়ে গেল কি না সেই বিষয়ে জানতে চেয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ ঘটনায় মেয়র বলেছেন, “আমাকে একটা রিপোর্ট দিতে হবে। পরিবার অভিযোগ করছে সেটা ঠিক আছে কিন্তু আগে জানতে হবে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমরা বলেছিলাম বর্ষার আগে যেন সমস্ত লাইট পোস্ট যেন ঠিকঠাক ব্যস্ত থাকে, তাহলে কেন এই দুর্ঘটনা ঘটল। সেটা জানতে হবে। তার জন্য তদন্ত হবে।” এ প্রসঙ্গে মেয়র পরিষদ সদস্য ( নিকাশি বিভাগ) তারক সিং বলেন, জলজমার কারণে মৃত্যু হয়নি। লোক বলতে ভয় পায়। আমার বলতে ভয় নেই। আমি কারও পরোয়া করিনা। যদি নির্দিষ্ট সিস্টেমে চলা না হয় তাহলে এই জলের জন্য বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের যে সময়টা ঝড়-জল-বৃষ্টি হয়। তখন আমরা যে কানকেশনগুলি দিই এগুলি শর্ট হতে পারে। সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন আমার ওখানে ওভারহেড কোনও লাইন নেই। আমার ওখানে আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন। তাহলে ওই পোস্টটায় বিদ্যুৎ গেল কী করে? তদন্ত এটা নিয়ে হওয়া উচিৎ। কাউন্সিলর বলেছেন ওটা বিএসএনএলের পোস্ট। প্রশ্ন হচ্ছে তারপরেও ওই পোস্টে বিদ্যুৎ এল কী করে?”
বস্তুত, রবিবার রাত্রিবেলা পড়তে বেরিয়েছিল নীতীশ যাদব নামে বছর বারোর এক কিশোর। নীতীশ হরিদেবপুরের বাসিন্দা। গতকাল বৃষ্টির জেরে রাস্তায় জমেছিল জল।নীতীশ গোড়ালির উপরে ওঠা সেই জল ঠেলতে ঠেলতে এগোচ্ছিল। হাতে ছিল একটি সাদা প্যাকেট। এভাবেই কিছুটা যেতেই ঠিক ওই বিদ্যুতের খুঁটির সামনে তার পায়ে কী যেন একটা লাগে। ওটাই বোধহয় মারণ ফাঁদ ছিল। ছেলেটি এরপরই রাস্তার ধারের ওই বিদ্যুৎ খুঁটিটি ধরে পা দেখবে বলে মনস্থির করেছে। তাতে হাত ছোঁয়াতেই হুড়মুড়িয়ে গিয়ে পড়ে জলে। তারপর সবটা শেষ। একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে এই ঘটনা নজরে পড়েছে।