কলকাতা : তিনি তৃণমূল বিধায়ক। লেখকও। তাঁর একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে বিতর্ক বেধেছে। দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির সাহিত্য উৎসবে মনুবাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদীদের না আসার ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারি। সাহিত্য উৎসবে এভাবে নির্দিষ্ট করে কাউকে যোগদান করতে নিষেধ করা বিভাজনের চেষ্টা বলে অভিযোগ করেছে বাম, বিজেপি।
ফেসবুকে কী লিখেছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারি?
গতকাল ওই ফেসবুক পোস্ট করেন মনোরঞ্জন ব্যাপারি। সেখানে তিনি লেখেন, বৃহস্পতিবার বাবাসাহেব ভীমরাও রামজি অম্বেদকরের জন্মজয়ন্তীতে নন্দন চত্বরে দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির সাহিত্য উৎসব শুরু হবে। এর পরই তিনি লেখেন, এত বড় আয়োজন, হতে পারে এর মধ্যে এক-দুজন মনুবাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদী-এককথায় আরএসএস বা বিজেপির দালাল ঢুকে পড়বে। এখানেই থামেননি তিনি। লেখেন, এমন যাঁরা আছেন, তাঁদের কাছে কবিতা বা গল্প পাঠের আমন্ত্রণপত্র গিয়ে থাকলেও জানবেন ভুলবশত গিয়েছে। এরপর কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে তাঁর বক্তব্য, “ব্রাহ্মণ্যবাদের দালালরা আসবেন না। কোনও ক্রুদ্ধ দলিত যদি গলা ধাক্কা দিয়ে আপনাকে তাড়িয়ে দেয়, তার দায়িত্ব আমরা নেব না।”
সাহিত্য উৎসবে যোগদান নিয়ে এমন হুঁশিয়ারির নিন্দা করেছে বাম, বিজেপি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় তো উনি চলেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এই কথা বললেন, নাকি নিজে বলেছেন। আগে বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করত। এখন সেই কাজ করছে তৃণমূল।” মনোরঞ্জনের বক্তব্যের নিন্দা করে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “মনোরঞ্জন ব্যাপারির দলের তো সবাই ব্রাহ্মণ্যবাদী। আসলে এরাই বিভাজন করছে। এখন সময় এসেছে এই দলটাকে তাড়ানোর। ৫০০ টাকা ভাঁওতা দিয়ে বেশিদিন চলবে না।” দলের সতীর্থের এইরকম পোস্ট নিয়ে তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলছেন, “উনি ঠিক কী লিখেছেন জানি না। তবে বিজেপি ও আরএসএসের দ্বারা দলিতরা দেশের সব জায়গায় আক্রান্ত হয়েছেন।”
মনোরঞ্জন ব্যাপারির পোস্ট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পুরো বিষয়টি শোনার পর তিনি বলেন, সাহিত্য উৎসবে যোগদান নিয়ে এমন লেখা ঠিক হয়নি।
তাঁর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর আজ আরও একটি পোস্ট করেন তৃণমূল এই বিধায়ক। সেখানে তিনি লেখেন, “যারা ব্রাহ্মণ কথার মানে জানে না, ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদের পার্থক্য বোঝে না। মনু কে? মনুবাদই বা কী, তাও জানে না। শুধু আবালের মতো এঁড়ে তর্ক করতে ভালবাসে। তাদের কথার জবাব দেওয়ার মতো সময় বা ইচ্ছে কোনওটাই আমার নেই।” বিতর্ক বাধার পর তাঁর পরবর্তী পোস্টে স্পষ্ট, নিজের বক্তব্য থেকে সরছেন না তৃণমূল এই বিধায়ক।
আরও পড়ুন : Kunal Ghosh: রাজ্য ভাল আছে, মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করাটা অবাঞ্ছিত: কুণাল