কলকাতা: “তৃণমূলে একটা চক্র কাজ করছে যাতে ভাল লোক দলে থাকতে না পারে”, এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করে তৃণমূলের (TMC) কোর কমিটি ও জেলা মুখপাত্রের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন হুগলির উত্তরপাড়ার বিধায়ক তথা প্রাক্তন সাংবাদিক প্রবীর ঘোষাল (Prabir Ghosal)। এদিন সাংবাদিক বৈঠক থেকে এ কথা ঘোষণা করে তিনি আরও বলেন, “ভেবেছিলাম বিধায়ক পদও ছেড়ে দেবো। মানুষের কথা ভেবে ছাড়ছি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলাম, বলেছি এই সব কথা। উনি বলেছেন অন্য আসনে দাঁড়াতে। কিন্তু আমি এখানকার ভূমিপুত্র, অন্য কোথাও দাঁড়াব না।” যদিও ক্ষোভ যতই থাকুক, তিনি যে এখনই দল ছাড়ছেন না সে কথাও জানিয়ে দিয়েছেন প্রবীর ঘোষাল। এদিকে পদত্যাগ এবং সাংবাদিক বৈঠকের পরই দলের পক্ষ থেকে তাঁকে শো’কজ করা হয়েছে।
প্রবীরের স্পষ্ট অভিযোগ,,দলের অন্দরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশও মানা হচ্ছে না। তৃণমূলের কোর কমিটির পাশাপাশি জেলা মুখপাত্রের পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি দলত্যাগী শুভেন্দু অধিকারী ও মন্ত্রিত্বত্যাগী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এদিন দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন তিনি। প্রাক্তন বনমন্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “রাজীব ভাল ছেলে। ভাল কাজ করেছে। এই ভাল লোকেরা দলে থাকতে পারছেন না।” অন্যদিকে প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী সম্পর্কে তিনি বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী বড় সংগঠক। মমতার পর ওই তো গ্রহণযোগ্য।” এমনকি, বৈশালী ডালমিয়ার বহিষ্কার নিয়েও দলের ভূমিকাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। এরপরই সাফ জানিয়েছেন, “বৈশালী ডালমিয়া বহিষ্কারের হওয়ার মতো এমন কিছু কথা বলেননি। উনি আমার মতো দলের অসুখের কথাই বলেছেন।”
জেলা তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, বেশ কিছু কাল ধরেই শ্রীরামপুর লোকসভার সাংসদ-আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হুগলির বর্তমান তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবের সঙ্গে বেশ কিছু প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে মতপার্থক্য সামনে আসছিল প্রবীণ সাংবাদিক তথা বিধায়ক প্রবীর ঘোষালের। এই সব বিষয় নিয়ে হুগলি জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে এর আগে একাধিকবার বৈঠকে বসেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এমনকি, খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেও আলোচনা হয়েছে। এবং খুব তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সে আলোচনায় টেলিফোনের মাধ্যমে বার্তা দিয়েছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরও প্রবীর ঘোষালের সমস্যা যে কাটেনি, তা এ দিনের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট।
এদিকে, প্রবীরবাবুর তৃণমূলের কোর কমিটি থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “মেরুদণ্ড আছে বলেই ছেড়ে দিয়েছেন। মেরুদণ্ড বিকিয়ে ওই দলে কেউ থাকতে পারবে না। আমি প্রবীরদার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।” ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রবীর এ দিন আরও বলেন, “দলের শুদ্ধিকরণ প্রয়োজন। যদি তা না হয়, তবে দলকে ভুগতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলার পরেও কেন সমস্যার সমাধান হল না, তা আমি বলতে পারব না। পার্টির শৃঙ্খলা নিয়ে কিছু বলার নেই। হুগলিতে অন্তর্কলহ বেড়েছে। আরও বেশি ঝগড়া বেড়েছে।”
আরও পড়ুন: ব্যারিকেড ভাঙল চাষিদের ট্রাক্টর, চলল জলকামান, আহত পুলিসকর্মী
প্রবীরের কথায়, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিরাশি সাল থেকে আছি। আমার মনে হয়, ভাল লোকেরা এভাবে এখানে থাকতে পারবে না। পিকে আসার পর তো হুগলির কোনও উন্নতিই হয়নি। দলে অনেক পচামুখ আছে। তাঁদের জন্যই সমস্যা। পচামুখের জন্যই দলের ক্ষতি হচ্ছে। হুগলি জেলায় হারার একটা বড় কারণ এটা। আমার খারাপ লেগেছে যে আমি কাল (মমতার সভায়) যেতে পারিনি। তবে এখনই দল ছাড়ার কথা ভাবছি না। গতকালের সভার জন্য যতটুকু প্রয়োজন সব কাজ করেছি। কোনও ব্যক্তির কুৎসা নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না।” প্রবীরের পদত্যাগের খবর চাউরল হতেই মাঠে নেমে পড়েছে পদ্ম শিবির। উত্তরপাড়ার বিধায়ককে দলে স্বাগত জানিয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “যে রাজনৈতিক দলের এত সাফল্য, তার এত দুর্দশা কেন? সবাই দল ছেড়ে দিচ্ছেন! প্রবীর বিজেপি-তে এলে স্বাগত।”
আরও পড়ুন: দিল্লির রাজপথে বাংলার ‘সবুজ সাথী’, সঙ্গী রবিঠাকুরের গান
অন্যদিকে, প্রবীরে এই সিদ্ধান্তের পরই তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “প্রবীর ঘোষাল দু’মুখো সাপ। দল কবে করলেন উনি? যিনি কাজের লোক হন, তিনি কাজ খুঁজে নেন। যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা কাজের জন্য ঘুরে বেড়ান।”