কলকাতা: উপনির্বাচনকে সামনে রেখে ফের রাস্তায় নামছেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। বেশ কিছু দিনের বিরতির পর আবার দলীয় কর্মসূচিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (TMC All India General Secretary)। আগামী ৭ এপ্রিল বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র এবং আগামী ৯ এপ্রিল আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনকে ‘পাখির চোখ’ করে প্রচারে নামবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ ও ওমিক্রন সংক্রমণের সময়ে নিজের লোকসভা কেন্দ্রের কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় আয়োজিত এক প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়ে অভিষেক বলেছিলেন “আমার ব্যক্তিগত অভিমত, আগামী দু’মাস সব কিছুই বন্ধ রাখা উচিৎ। ডায়মন্ডহারবারে সব রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ থাকবে এবং করোনা পরীক্ষার ওপর জোর দেওয়া হবে।”। অভিষেকের এই মন্তব্যের পর বাংলার রাজনীতিতে ‘ডায়মন্ডহারবার মডেল’ শব্দবন্ধের আবির্ভাব হয়েছিল। অনেকেই বলেছিলেন, ইঙ্গিতে গঙ্গাসাগর মেলা এবং পুর ভোট বন্ধের পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন তরুণ সাংসদ। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই নাম করে অভিষেককে আক্রমণ করেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । গোয়ায় নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে হাল্কা চালে কল্যাণ পাল্টা উত্তর দিয়েছিলেন অভিষেক। তিনি বলেছিলেন “উনি তো ঠিকই বলেছেন, উনি যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কাউকে মানেন না , আমিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কাউকে মানি না।”
এরপর রাজ্যের পুরসভার প্রার্থী তালিকা ঘিরে দলের অন্দরে আইপ্যাক বনাম তৃণমূল দ্বন্দ্ব সামনে এসেছিল। বিশেষত আইপ্যাকের প্রস্তাবিত নাম নিয়ে দলের প্রবীণ নেতাদের একটা বড় অংশের তীব্র আপত্তি ছিল। পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে আসরে নেমেছিলেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সংগঠনে বেশ কিছু রদবদল আনেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভিষেকের ওপর আস্থা রাখলেও সংগঠনে প্রবীণ নেতাদেরও গুরুত্ব দিয়েছিলেন মমতা। শীর্ষ কমিটি থেকে বাদ পড়েছিলেন অভিষেক ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু প্রবীণ নেতারাও । যাবতীয় জল্পনার অবসান হয় নজরুল মঞ্চের সাংগঠনিক সভায়। সেদিন প্রশান্ত কিশোর সহ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু আলাদা করে বক্তব্য রাখতে শোনা যায় নি তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদককে। মাঝে ইডি দফতরে গিয়ে গোয়েন্দাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বাইরে বেরিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন অভিষেক। নিজেকে ‘অন্য মেটেরিয়াল’ বলে দাবি করে বিজেপির চাপের কাছে মাথা নোয়াবেন এই কথা স্পষ্ট করেই সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়েছিলেন। তবে বীরভূমের বগটুইয়ের ঘটনা নিয়ে অভিষেকের নীরবতা রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
এবার নীরবতা ভেঙে আবার ও পথে অভিষেক। উপনির্বাচনের বৈতরণী পার হতে দলের ভরসা সেকেন্ড ইন কমান্ডের ওপরই ভরসা রাখছে তৃণমূল। সাধারণ মনে করা হয়, উপনির্বাচনে শাসক দল অনেকেটাই এগিয়ে থাকে। তবে বালিগঞ্জ এবং আসানসোলের ভোট যুদ্ধে বেশ কিছু কাঁটা নিয়ে চিন্তিত ঘাসফুল শিবির। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বালিগঞ্জে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে নানা অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তৃণমূলে আস্থা রাখা সংখ্যালঘুদের একটা অংশও বিজেপিতে থাকাকালীন বাবুলের কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ। কে ঘিরে বিক্ষোভ দানা বেঁধেছে। এই অবস্থায় অভিষেকের মতো তৃণমূলের শীর্ষ নেতার উপস্থিতি সংখ্যালঘু অংশের মধ্যে আস্থা ফেরাতে পারে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। অন্যদিকে আসানসোলে বিজেপির প্রভাব রয়েছে। সাংগঠিকভাবে বিজেপি সেখানে শক্ত, পাশাপাশি দলীয় কোন্দলও তৃণমূলের কাছে চিন্তার কারণ। তাই জয় নিশ্চিত করতে সেখানেও অভিষেক মাঠে নামছেন।