কলকাতা: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহার নাম ঘোষণার পর এনডিএ শিবির থেকে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম সামনে আসতেই খেদ শোনা গিয়েছিল মমতার গলায়। তিনি বলেছিলেন, “দ্রৌপদী মুর্মুর জয়ের সম্ভাবনা বেশি। বিজেপি যদি আগে জানাত তারা একজন আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করছে, তাহলে আমরাও ভেবে দেখতাম।” আর এবার উপরাষ্ট্রপতি পদে এনডিএ প্রার্থী জগদীপ ধনখড়ের বিপরীতে বিরোধী জোটের প্রার্থী মার্গারেট আলভার নাম সামনে থাকা সত্ত্বেও একুশে জুলাইয়ের সবা শেষে বিশেষ বৈঠক সেরে তৃণমূল জানিয়ে দিল তারা ভোট দানে বিরত থাকবেন। কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত, এটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন।
কংগ্রেসের ‘একাধিকপত্যে’ তৃণমূলের নিঃশব্দ প্রতিবাদ?
বাংলার সদ্য প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা এনডিএ-র উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জগদীপ ধনখড়কে যে তৃণমূল যে ‘মধুর’ সম্পর্কের ইতিহাস তাতে তাঁকে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল সমর্থন করবে না তা আগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। তবে বিরোধী পদপ্রার্থী মার্গারেট আলভাকে সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা ব্রিগেড। এই পরিস্থিতিতেই প্রশ্ন উঠছে, জাতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্যের সংহতি নিয়ে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ভোটে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত আদপে বিরোধী শিবিরে কংগ্রেসের ‘একাধিকপত্যে’ তৃণমূলের নিঃশব্দ প্রতিবাদ। ঘটনাচক্রে ২১শে জুলাই সোনিয়া গান্ধীকে ইডি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা সত্ত্বেও মঞ্চ দাঁড়িয়ে এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ায় মমতার কংগ্রেসের প্রতি মনোভাব ফের স্পষ্ট হয়েছে বলেও অভিমত ওয়াকিবহাল মহলের।
বিরোধী ঐক্যে মমতার গ্রহণযোগ্যতা আরও তলানিতে এসে ঠেকল?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্তে আদপে বিরোধী ঐক্যে মমতার প্রকৃত আগ্রহ নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে গেল। কেউ কেউ মনে করছেন, একরোখা মমতার সিদ্ধান্তে আদপে জাতীয় রাজনীতির ময়দানে এর ফলে প্রাসঙ্গিকতাও হারাতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও অভিষেকের দাবি, “বৈঠকে আলোচনার সময় ৮৫ শতাংশ সাংসদ উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দানে বিরত থাকার কথা বলেন। মমতাকেও তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা জানান। যে ভাবে কোনও আলোচনা না করে শেষ মুহূর্তে উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঠিক হয়েছে তাতে আমরা ক্ষুব্ধ। তারপরেই তৃণমূল সাংসদরা ঠিক করেছেন তৃণমূল আগামী ৬ তারিখ ভোটাদানে বিরত থাকবেন।”
নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত?
এদিকে শেষ লোকসভা নির্বাচনেও বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ হয়ে উঠতে কোনও কসরতই বাকি রাখেননি মমতা। এমনকী উনিশের নির্বাচনের আগে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’র সভা ডেকে তামাম ভারতবর্ষের সামনে বিরোধী সংহতির ছবি তুলে ধরতে সচেষ্ট হন। তবে বিরোধী শিবিরের সমস্ত সমীকরণ ওলটপালট করে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় ফিরেছিল মোদী ব্রিগেড। তবে সে যাত্রায় না হলেও, এবার ফের আশাবাদী মমতা। উল্লেখযোগ্যভাবে এদিন একুশের মঞ্চ থেকে মমতার প্রত্যয়ী উচ্চারণ, “চব্বিশে বিজেপি একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাবে না।” এরপরেই তাঁর সংযোজন, বিরোধী দলগুলি মিলে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করবে। অর্থাৎ, নির্বাচন পরবর্তী জোটের ইঙ্গিত এ ক্ষেত্রে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি নির্বাচনের আগে জোট সম্ভব না, তা বুঝে গিয়েছেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? সে কারণেই কি ইভিএম-এ কার কতটা কব্জির জোর তা পরখ করেই জোট একমাত্র সম্ভব, উঠছে সে প্রশ্নও।