কলকাতা: আরজি করের প্রশিক্ষণাধীন মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন চিকিত্সকরা। সতঃপ্রণোদিতভাবে এই মামলা গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তিলোত্তমার বিচার চেয়ে এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে, গত ১০ দিন ধরে টানা চলছে চিকিত্সকদের প্রতিবাদ-আন্দোলন। জরুরি বিভাগ, আউটডোরের মতো কয়েকটি বিভাগ ছাড়া ব্যাহত প্রায় সকল বিভাগের পরিষেবা। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালত তাঁদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেছিল। তবে, সবিনয়ে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন চিকিৎসকরা। এই অবস্থায় বুধবার (২১ অগস্ট), চিকিৎসকদের সামনে পুলওয়ামা প্রশ্ন রাখলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, সেনা সদস্যরা যদি চিকিৎসকদের মতো ন্যায়বিচার চেয়ে ধর্মঘট করতেন, তাহলে কী হত?
নোট বাতিলের সময়, নতুন নোট তোলা ও পুরোনো নোট জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল নাগরিকদের। বহু মানুষ অসুবিধার মুখে পড়েছিলেন। অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছিল। সেই সময় বিজেপির নেতারা, এমনকি কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও সিয়াচেনের উদাহরণ দিয়েছিলেন। সিয়াচেনের প্রতিকূল পরিবেশে সেনা জওয়ানরা দেশকে সুরক্ষা দিচ্ছেন। সেই কথা মাথায় রেখে, দেশের মানুষকে দেশের স্বার্থে নোট বাতিলের যন্ত্রণা সহ্য করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁরা। এদিন অনেকটা সেই ধাঁচেই আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পুলওয়ামা কাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, “চিকিৎসকদের কর্মবিরতি তোলার অনুরোধ-সহ প্রশ্ন – পুলওয়ামার ঘটনার এখনও ন্যায়বিচার হয়নি। তাই, পুলওয়ামায় ‘we want justice’ বলে জওয়ানরা যদি সীমান্ত ছেড়ে এসে ধর্নায় বসেন, সেটাকে কীভাবে দেখবেন?”
চিকিৎসকদের কর্মবিরতি তোলার অনুরোধসহ প্রশ্ন-
পুলওয়ামার ঘটনার এখনও ন্যায়বিচার হয়নি। তাই পুলওয়ামায় ‘we want justice’ বলে জওয়ানরা যদি সীমান্ত ছেড়ে এসে ধর্ণায় বসেন, সেটাকে কীভাবে দেখবেন?
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) August 21, 2024
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের কনভয়ের উপর জঙ্গি হামলা হয়েছিল। একটি বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে সিআরপিএফ-এর কনভয়ে ধাক্কা মেরেছিল জঙ্গিরা। চল্লিশ জন সিআরপিএফ কর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। এর দুই সপ্তাহের মধ্যে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে, জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর এক প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। নির্মূল করে দেওয়া হয়েছিল ওই ঘাঁটি।
তবে, সেই ঘটনার সঙ্গে তিলোত্তমা কাণ্ডের প্রেক্ষিতে চলা দেশব্যাপী চিকিত্সকদের আন্দোলনের কোনও তুলনা হয় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধ করলেও, কর্মস্থলে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিকদের মতো স্বাস্থ্য পরিষেবা দানকারীদের বিরুদ্ধে হিংসা প্রতিরোধ এবং কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, একটি ১০ সদস্যের জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে কুণাল ঘোষ এই মন্তব্য করলেন। তিলোত্তমা কাণ্ড নিয়ে আপাতত ব্যাকফুটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। সরকার যেভাবে এই ঘটনার তদন্ত পরিচালনা করেছে, তা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টও রাজ্য সরকার ও রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তার আগে গত মঙ্গলবার, এই মামলার তদন্ত ভার সিবিআই-কে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)