কলকাতা: আচমকা সৃষ্ট টর্নেডোর জেরেই উত্তরে চলল ধ্বংসলীলা। পাঁচজন বলি হয়েছেন দুর্যোগের। বিপর্যয় খতিয়ে দেখতে গ্রামে যাচ্ছে মৌসম ভবনের টিম। গত ক’দিন ধরেই উত্তরে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। তবে টর্নেডোর পূর্বাভাস কখনওই আগে থেকে দেওয়া সম্ভব নয়। যেহেতু হঠাৎ করেই টর্নেডো সৃষ্টি হয়, তাই ক্ষতি এড়ানোও এক্ষেত্রে কঠিন। গত বছর এই টর্নেডোই আমেরিকায় প্রাণ কেড়েছিল ৮২ জনের। তবে বাংলাতেও গত এক দেড় বছরের একাধিকবার টর্নেডো দেখা গিয়েছে। সুন্দরবন থেকে হুগলি, এক ছবি। তাহলে কি বাংলায় টর্নেডো বাড়ছে? এবার খতিয়ে দেখার সময় এসেছে আবহাওয়া দফতরেরও। সে কারণেই একেবারে টিম চলেছে উত্তরবঙ্গে।
অসমের উপর একটা ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প উত্তরবঙ্গে এখনও যাচ্ছে। ফলে আজ-কাল উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি বিশেষ করে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে দমকা বাতাস বইতে পারে। ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে বাতাস। মৌসম ভবনের টিম ঘটনাস্থল ঘুরে বোঝার চেষ্টা করবে কত কিলোমিটার বেগে ওখানে ঝড় বয়েছে।
বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর ও নিচের স্তর বায়ুপ্রবাহের অভিমুখ যখন উল্টোদিকে হয় এবং দুই স্তরের বায়ুপ্রবাহের গতির মধ্যে বড়সড় ফারাক তৈরি হয়, তখনই এই ধরনের টর্নেডো তৈরি হয়। আলিপুরের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বিহার থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটা নিম্নচাপ অক্ষরেখা থাকায় বিপুল পরিমাণে জলীয় বাষ্প উত্তরবঙ্গে চলে যাচ্ছে। তার প্রভাবে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গাজুড়ে কোথাও কালবৈশাখী, কোথাও ঝড়, কোথাও মিনি টর্নেডো। টর্নেডো নামে মিনি হলেও, কয়েক মিনিট এমনকী কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ধূলিসাৎ গোটা এলাকা।
১৯৮৩ সালের ১২ এপ্রিল গাইঘাটায় টর্নেডোয় এক বৃদ্ধাকে উড়িয়ে নিয়ে গাছের উপর ফেলেছিল। বাঁশঝাড় উপড়ে গিয়েছিল গোড়া থেকে। প্রায় ৯ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মারা যান ২৫০ জন। জখম ৩ হাজার।
২০১৫ সালে অশোকনগরে, ২০১৬ সালে আবার গাইঘাটায় টর্নেডো হয়। ২০২১ সালে ইয়াসের আগে ব্যান্ডেল, হালিশহরে টর্নেডো হয়। ইয়াস চলে যাওয়ার পর অশোকনগর-গুমায় টর্নেডো হয়। সবমিলিয়ে ১৫০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জখম হন ৬ জন। ২০২১ সালের ৯ জুন টর্নেডো হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপে। সর্বশেষ সংযোজন ৩১ মার্চে জলপাইগুড়ির ঘটনা।