কলকাতা: লকডাউন পর্ব পার করে বহু দিনই হল সড়ক পরিবহণ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে এ রাজ্যে। কিন্তু বেসরকারি বাস (Bus) নিয়ে সমস্যা যেন আর কিছুতেই মিটছে না। এখনও বহু রুটে বাসের অভাব। দীর্ঘ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য হাপিত্যেশ করতে হচ্ছে নিত্য যাত্রীদের। পাশাপাশি বাস কম থাকায় এক বাসেই গাদাগাদি করে মানুষকে উঠতে হচ্ছে। ফলে গোল্লায় যাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধিও। এবার এই বাস-সমস্যা নিয়ে কঠোর রাজ্য পরিবহণ দফতর। রাস্তায় বাসের সংখ্যা কম কেন, তা জানতে চেয়ে বাস মালিক সংগঠনগুলিকে চিঠি দিল রাজ্য সরকার।
রাস্তায় বেরিয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে সেই কারণেই এই চিঠি। কোন রুটে কত বাস চালানো হচ্ছে তার তালিকাও চাওয়া হয়েছে বাস মালিকদের কাছ থেকে। বেসরকারি বাসের ক্ষেত্রে এই তালিকা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্নে পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। এই বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
একদিকে লকডাউনে দীর্ঘদিন বাস চলাচল বন্ধ ছিল। বাস মালিকদের দাবি, লকডাউন উঠলেও লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকায় তাঁদের যাত্রীসংখ্যা কম হচ্ছে। এদিকে যে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, তাতে খরচে পোষাচ্ছে না। তাই বাসের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বেশ কয়েক মাস ধরেই সরব তাঁরা। এ নিয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে বৈঠক, চিঠি চাপাটি কম হয়নি।
তবে রাজ্য সরকার এই অতিমারিকালে কোনও ভাবেই সাধারণ মানুষের পকেটে চাপ বাড়াতে প্রস্তুত নয়। এখনই ভাড়া বাড়ানোয় সায় নেই তাদের। বাসের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে রাজ্য সরকার বার বারই বলেছে, কোনও ভাবেই অতিমারির আবহে সাধারণ মানুষের উপর আর অর্থনৈতিক বোঝা চাপানো যাবে না। পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আগেই জানিয়েছিলেন, “অতিমারি চলছে। মানুষের হাতে এমনিই টাকা পয়সা নেই। এই অবস্থায় কোনও ভাবেই ভাড়া বাড়ানো সম্ভব নয়। বাস মালিকদের সাধারণ মানুষের কথা ভাবতে হবে। আমরা জানি পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাস মালিকরা সমস্যায় পড়েছেন। আমরা তাঁদের সমস্যার কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু বর্তমান সময়ের কথা মাথায় রেখে সাধারণ মানুষের উপরে বাড়তি আর্থিক চাপ দেওয়া যাবে না।”
এদিকে প্রথম থেকেই বাস মালিকদের দাবি, রাজ্য সরকারের উচিৎ ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা। এরই মধ্যে বাস মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, বিভিন্ন রুটে ইচ্ছা মতো ভাড়া হাঁকছেন কনডাক্টর। না দিলে মুখের উপর যাত্রীকে বলছেন, বাস থেকে নেমে যেতে। বাড়তি বাস ভাড়া নেওয়ার অভিযোগে একাধিক বাস মালিককে শোকজও করা হয় পরিবহণ ভবনের তরফে। এমনকী নির্ধারিত ভাড়ার থেকে বেশি নিলে পারমিট বাতিল হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। যদিও সে সময় বাস মালিকরা বলেছিলেন, এ ভাবে চলতে থাকলে তাঁদের পক্ষে বাস চালানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে।
এরই মধ্যে গত কয়েকদিনে বাসের সংখ্যা রাস্তায় যে হারে কমেছে তাতে যাত্রীদেরও গভীর সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। এবার কোন রুটে কত বাস চলছে তার হিসাব চলব করা হল পরিবহণ দফতরের তরফে। একই সঙ্গে জানতে চাওয়া হল কেন এত কম বাস রাস্তায় নামছে।
আরও পড়ুন: পা পড়ার আগেই হোঁচট, মমতা-সাক্ষাতে ‘না’ গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টির