সুজয় পাল: TV9 বাংলার খবরের জের। অবশেষে এনআরএস হাসপাতালে শয্যা পেলেন মূক-বধির মহাদেব সরকার। গত তিন দিন ধরে শহরের চারটি সরকারি হাসপাতালে ধাক্কা খেতে হচ্ছে মূক ও বধির এই যুবক ও তাঁর পরিবারকে। গাছ থেকে পড়ে তাঁর কোমরের হাড় ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু শহরের চারটি সরকারি হাসপাতাল এত দিনেও তাঁকে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করার কোন ব্যবস্থা করেনি। ফলে জন্ম থেকে মূক ও বধির এই যুবক পঙ্গু হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় ছিল পরিবার। লাগাতার খবরের TV9 বাংলার খবরের জেরে অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি হলেন মহাদেব।
উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের বাসিন্দা মহাদেব সরকার। বছর তেইশের মহাদেব ছোট থেকেই কথা বলতে ও শুনতে পারেন না। তবে দিব্যি চলাফেরা করতে পারতেন। বাড়িতে চাষবাস দেখাশোনার কাজ করতেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাড়ির গাছের ডাল কাটতে গিয়ে পড়ে যান। সেদিনই স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়।
জানানো হয় কোমরের হাড় ভেঙে গিয়েছে মহাদেবের। অস্ত্রোপচার করতে হবে। সেই চিকিৎসা সেখানে সম্ভব নয়। ঘটনার ১১ দিনের মাথায় আরজিকর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
চলতি মাসের ৪ তারিখে নিয়ে আসা হয় আরজিকর হাসপাতালে। ডাক্তার না থাকায় মৌখিকভাবে বলা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে। ৪ তারিখই এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরিবারের দাবি, এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে বলা হয়, “এমার্জেন্সিতে ভর্তি নেওয়া হবে না। দেরি হয়েছে। পরদিন আউটডোরে দেখাতে হবে।” ৫ অক্টোবর আউটডোরে মহাদেবকে দেখায় পরিবার। এরপর এসএসকেএম হাসপাতালের তরফে বলা হয়, “বেড নেই। ভর্তি হবে না। বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয়।” পরিবারের অভিযোগ, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকতেও তার সুবিধা তাঁরা পাননি।
বুধবার রাতে প্রথমে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মহাদেবকে। সেখান থেকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে এনআরএস নিয়ে আসা হয়। তবে এনআরএস হাসাপাতালেও তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। বরং ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলা হয়। ফলে এই পরিস্থিতিতে চরম অসহায় মহাদেব সরকারের পরিবার।
মহাদেবের এক আত্মীয় বলেন, “ছেলেটা নিয়ে এমনিতেই আমরা কষ্টে ছিলাম। তবুও নিজের মতো কাজ করে ভালই থাকত মহাদেব। কপালটাই খারাপ। গাছ থেকে পড়ে গিয়ে বিপদ আরও বাড়ে। সেদিন থেকে আমরা হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরছি। এখনও পর্যন্ত সঠিক চিকিত্সা শুরুই হল না। কীভাবে হবে, কী করব, ভেবে পাচ্ছি না। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে বেড়াচ্ছি। কবে যে ঠিকঠাক চিকিত্সা শুরু হবে কে জানে! এদিকে ওর শরীরের অবস্থাও খারাপ হতে শুরু করেছে।” ঘটনায় হাসপাতালের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পরে অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি হন মহাদেব।
আরও পড়ুন: Sukanta Majumder: ‘এঁরা থাকতে কাজ করতে পারিনি’ সব্যসাচীর ঘরওয়াপসি-তে মুখ খুললেন সুকান্ত