কলকাতা: লুঠপাট ও দুষ্কৃতী হামলার অভিযোগ জানাতে থানায় গিয়েছিলেন যুবক। জানিয়েছিলেন, তাঁকে মারধর করে প্রায় কোটি টাকার সোনা নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই শুরু হয় তদন্ত। এরপরই চোখ কপালে ওঠার জোগার হয় গিরিশ পার্ক থানার পুলিশের। ২৯ বছর বয়সী নীতীশ রায় নামে যে যুবক থানায় গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের মুখে শেষমেশ তিনি জানান, ‘আমিই সবটা করেছি’। সিংহীবাগানে সোনা লুঠের ঘটনায় নীতীশ রায় ও তাঁর ভাই নিতিন রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গোটা কাণ্ডের মূল চক্রী নীতীশই। ভাই নিতিনের ভূমিকা ছিল, দাদার হাত শক্ত করা।
ওড়িশার বাসিন্দা এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ব্যবসা হল সোনার বার কেটে ছোট করা। সিংহীবাগানে জোড়াসাঁকো আবাসনে দু’টো ফ্ল্যাট তিনি ভাড়া নেন। একটায় কাজ চলত, অন্যটায় কর্মচারীরা থাকতেন। সোনার বার কেটে ছোট করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হত। নীতীশ রায়ই কলকাতায় সবটা দেখাশোনা করতেন। মাঝেমধ্যে ওই স্বর্ণব্যবসায়ী আসতেন।
সোমবার সকালে একটি ট্যাক্সি সিংহীবাগানের আবাসনের সামনে দাঁড়ায়। দু’জন নেমে ভিতরে ঢোকেন। কিছুক্ষণ পর আবার ট্যাক্সিতে উঠে চলে যান। এরপরই নীতীশ রায় বেরিয়ে এসে বলেন, “দু’জন দুষ্কৃতী এসে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।” এরপরই সোমবার রাতে থানায় যান নীতীশ। সে সময় মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল তাঁর।
পুলিশকে জানান, ট্যাক্সি করে দুই দুষ্কৃতী এসে সিংহীবাগানের অফিস থেকে সোনা লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। লুঠ হওয়া সোনার পরিমাণ প্রচুর। সোনার ৭টি বার। এক একটির ওজন ১১৬ গ্রাম এবং ১টি সোনার বার যার ওজন ৭৪৩ গ্রাম। নীতীশ অভিযোগ করেন, বাধা দিলে তাঁকে আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় একাধিক অসঙ্গতি ধরা পরে পুলিশের চোখে। লাগাতার জেরায় ভেঙে পড়েন নীতীশ। স্বীকার করেন, লুঠের গল্প সবটাই ভুয়ো। আসলে সোনা লুঠ করেছেন তিনি নিজেই। সেই লুঠ হওয়া সোনা লুকোতে সাহায্য করেছেন ভাই নিতিন। রাতেই তল্লাশি চালায় পুলিশ। উল্টোডাঙা রেল আবাসনের কাছে একটি ক্লাব লাগোয়া পরিত্যক্ত ঘর থেকে উদ্ধার হয় সমস্ত সোনা। নীতীশ ও নিতিনকে গ্রেফতার করে গিরিশ পার্ক থানার পুলিশ।