কলকাতা: প্রথমে শিবপুর। তারপর রিষড়া। বিগত কয়েকদিনে দুই দফায় অশান্তি ছড়িয়েছে রাজ্যে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস থেকে শুরু করে হাইকোর্টও। তাই হনুমান জয়ন্তীর দিনে যাতে নতুন করে তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে কড়া প্রশাসন। বেশ কিছু জায়গায় মোতায়েন হয়েছে আধাসামরিক বাহিনী। একনজরে দেখে নেওয়া যাক, রাজ্যের কোথায় কেমন চলছে হনুমানজয়ন্তীর অনুষ্ঠান।
হাওড়ার গুলমোহর থেকে হনুমান জয়ন্তীর একটি শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। তবে শুভেন্দুবাবু মিছিল শুরুর কিছু সময় পরে শোভাযাত্রার সঙ্গে পা মেলান। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। যে রুট ধরে শোভাযাত্রা এগোয়, সেই রুটের সংলগ্ন বহুতলের ছাদ থেকেও নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে।
হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে দুর্গাপুরের ওল্ডকোর্ট এলাকায় বিশাল পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। পদযাত্রায় বহু ভক্তদের সমাগম হয়। এই পদযাত্রায় যাতে কোনও রকম বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য দুর্গাপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে কমব্যাট ফোর্সও। এছাড়াও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তার উপস্থিতিতে ড্রোন দিয়ে চলে কড়া নজরদারি।
রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজ্যের তিনটি জায়গাতে তিন কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। হাওড়া, চন্দননগর, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকাতে মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে যে আদালতের নির্দেশ মেনে বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হবে। বুধবার রাতে চুঁচুড়া, কামারহাটিতে রুটমার্চ করেছে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নজর রাখছে রাজ্য পুলিশও।
বিস্তারিত পড়ুন: হনুমান জয়ন্তীতে সতর্ক রাজ্য, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে টহল কেন্দ্রীয় বাহিনীর
বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্যপাল প্রথমে যান উত্তর কলকাতার লেকটাউনে। সেখানে হনুমান মন্দিরে তিনি প্রথম পুজো দেন। সেখান থেকে তিনি রওনা দেন একবালপুরে। অতি সম্প্রতি রাজ্যে ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দিতে রাজ্যপাল বললেন, “বেঙ্গল উইল সেট আপ অ্যা ট্রেন্ড।”
বাঁশবেড়িয়ায় হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার মুখে রাস্তাতেই বসে পড়লেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। রাস্তায় বসেই হনুমান চালিশা পাঠ করলেন লকেট।
বেশ কিছু এলাকায় দেখা গিয়েছে, তরোয়াল খেলা। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা রাস্তার মাঝে তরোয়াল খেলা দেখান। তবে আদালত স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, শোভাযাত্রায় অস্ত্র বা লাঠি রাখা চলবে না। এরইমধ্যে হাতে তরোয়াল থাকায় পুলিশ আটকায় এক জায়গায়। বাদানুবাদ তৈরি হয়। যদিও পরে স্বাভাবিক ছন্দেই এগিয়ে যায় হনুমান জয়ন্তীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।
হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রায় পুজো দিতে যাচ্ছিলেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। বাঁশবেড়িয়া এলাকায় একটি শোভাযাত্রায় যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু বাঁশবেড়িয়ায় ঢোকার আগেই পুলিশ আটকে দেয় লকেটকে। সাংসদের দাবি, পুলিশের তরফে বলা হয়েছে তিনি ‘আউটসাইডার’। লকেটের বক্তব্য, তিনি সাংসদ। কোনও কিছু হলে লোকজন তাঁকেই ডাকে। সেখানে কেন তাঁকে আটকানো হচ্ছে? প্রশ্ন লকেটের। সাংসদের বক্তব্য, তিনি সেখানে গিয়ে পুজো দেবেন, দশ মিনিট থাকবেন। তাঁর প্রশ্ন, তিনি সেখানে গেলে কী গন্ডগোল হবে?