কলকাতা: রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে বেছে নেওয়া হচ্ছে, এমনই মত শিক্ষামহলের একাংশের। রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতে দ্বিধাবিভক্ত তারা। এক পক্ষের দাবি মুখ্যমন্ত্রী আচার্য হোন। পত্রপাট খারিজ আরেক পক্ষের। দুই পক্ষই চাইছে আচার্য ও বিকাশ ভবনের মধ্যে সমন্বয় আসুক। তবে আচার্যের (রাজ্যপাল) কর্মকাণ্ড অপছন্দ সদ্য প্রাক্তন উপাচার্যদের। আচার্য স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করুন, দাবি ১৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদেরও। বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিয়ে সরব দুই পক্ষ।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অভূতপূর্ব সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার নিরসন করতেই এই সাংবাদিক সম্মেলেন। ৩১টা বিশ্ববিদ্যালয় পশ্চিমবঙ্গে। অথচ ১টারও উপাচার্য নেই। আরও উৎকন্ঠার ইন্টেরিম ভাইস চান্সেলারও নেই। সম্মানীয় আচার্য ১৩ জন অধ্যাপককে দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ সামলাবেন। কিন্তু এটা আইনি নিয়োগ নয়। আমাদের রাজ্যে ঠিক এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে, শিক্ষার স্বার্থে সমন্বয় প্রয়োজন।”
উপাচার্য নিয়োগ যেন মিউজিক্যাল চেয়ার মত প্রাক্তন উপাচার্য শিবাজিপ্রতিম বসুর। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিবাজিপ্রতিম বসু বলেন, “ভাইস চান্সেলার একটা পরিবারের কর্তার মতো। এরজন্য একজন স্থায়ী উপাচার্য প্রয়োজন। আগে নিয়ম ছিল ৫ বছরের, এখন হয়ে গিয়েছে ১০ বছরের। স্থায়ী যদি না থাকেন ওই নিয়ম মেনেই একজন অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য থাকা দরকার। তেমনটা হয়েওছিলেন। আচার্যই নিয়োগ করেন। কিন্তু কয়েকদিন পর দেখা গেল তাঁরা আর থাকলেন না। কেন থাকলেন না, একটা কোথাও আটকে গেল। কোথাও একটা যেন ছেদ পড়ে গেল। কেন তা হল বোঝা গেল না। তিনিই তো নিয়োগ করলেন। অথচ এর জন্য এখন একটা অচলাবস্থা তৈরি হল। এ যেন একটা মিউজিকাল চেয়ার।”
তাহলে সমাধান কোন পথে? একপক্ষ চাইছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। আরেক পক্ষ রাজনীতি মুক্ত এক শিক্ষাবিদকে চান। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ উপাচার্য গৌতম পাল বলেন, “সরকারের সাংবিধানিক প্রধান হচ্ছেন রাজ্য়পাল। এক্সিকিউটিভ প্রধান হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কোন বিভাগ কীভাবে কাজ করবে তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী আচার্য হলে বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়সাধন আরও ভাল হবে। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আরও সুচারুভাবে হবে।”
যদিও এই প্রস্তাবকে পত্রপাট খারিজ শিক্ষা মহলের অন্য অংশের। রাজনীতি মুক্ত শিক্ষাবিদ চাই বললেন জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়। তাঁদের দাবি, রাজ্যপাল রাজ্যের এই খেলা বন্ধ হোক। তিনি বলেন, “আচার্যকে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাটা বুঝতে হবে। সমন্বয় সাধনের জন্য তো অফিসাররা আছেন, আমলারা আছেন। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে সমন্বয় সাধন করতে হবে এরকম তো কিছু নেই। আমাদের বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভাববে এরকম শিক্ষাবিদদের বসানো হোক। কোনও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট লোক আমাদের দরকার নেই।”
এ প্রসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সনাতন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের এখন এমন পরিস্থিতি ক্লাসরুম ছেড়ে শিক্ষা বাঁচাতে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। সাংবিধানিক ব্যবস্থায় এখন যারা মাঠে খেলছে সেই সরকার ও রাজ্যপালের রেফারির ভূমিকায় নামার কথা ছিল। রাজ্যপাল আমাদের আচার্য। শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের ভূমিকা ক্রিকেট মাঠের আম্পায়ারের ভূমিকায় থাকার কথা। তারা নিজেরাই মাঠে খেলতে নেমেছে। তার জন্য দুই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে লড়াইয়ে নেমে যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে বেছে নিচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। এই পরিস্থিতিতে যা হয়, উলুখাগড়ার বিনাশ হচ্ছে। মরছে শিক্ষা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থী আর শিক্ষার সঙ্গে জড়িত আমরা যারা শিক্ষাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছিলাম। আমাদের মর্যাদা, প্রয়োজনীয়তা শিক্ষা ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে ধ্বংস করা হচ্ছে।”