জলপাইগুড়ি: ভূতের ভয়ে আর জপতে হবে না রাম নাম। করতে হবে না কীর্তন। বিকানির-গৌহাটি এক্সপ্রেসের (Bikaner-Gauhati Express) অভিশপ্ত কামরাগুলিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হওয়ায় কার্যত যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল দোমহনি গ্রামের বাসিন্দাদের। সূত্রের খবর, গত ১৩ জানুয়ারি জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের দোমহনীতে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে যায় বিকানির-গৌহাটি এক্সপ্রেসের ১১ টি কামরা। ঘটনায় মৃত্যু হয় ৯ জনের। আহত হয় অনেকে। এরপর প্রায় এক বছর ধরে ঘটনাস্থলে পড়েছিল কামরাগুলি।
শোনা যায়, ঘটনার কয়েকদিন পর থেকে অভিশপ্ত কামরাগুলি থেকে রাতে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতেন গ্রামবাসীরা। ভূতের ভয় ছড়াতে থাকে আশপাশের গ্রামগুলিতে। ভূতের ভয়ে ট্রেনের কামরাগুলির কাছে পুজোও দিয়ে যান অনেকে। কীর্তনও শুরু হয়। এদিকে এলাকায় ভূতের ভয় কাটাতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে রাত জেগেছিলেন খোদ বিডিও। রাত জেগেছিলেন ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরাও। তাতেও আতঙ্ক না কাটায় এক আমাবস্যার রাতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় রাত জেগে গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার করেছিলেন ময়নাগুড়ি থানার আইসি তমাল দাস। তাতে কয়েকদিন খানিক আতঙ্ক কমলেও মাস ঘুরতে না ঘুরতেই ফের ভূতের ভয় সিঁটিয়ে যান এলাকার বাসিন্দারা। এমনকী কামরাগুলি যে এলাকায় পড়েছিল সেখান দিয়ে কেউ যাতায়াত পর্যন্ত করত না।
সম্প্রতি রেলের পক্ষ থেকে ওই ১১ টি কামরা নিলাম করা হয়। বরাত পায় শিলিগুড়ির একটি সংস্থা। সেই কোম্পানির কর্মীরা এলাকায় পুজো দিয়ে শুরু করেন কাজ। এরপরই গ্যাস কাটার দিয়ে কামরাগুলিকে কেটে ফেলার কাজ শুরু করে। আর এতেই যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে ময়নাগুড়ি দোমহনী গ্রামের একাংশ বাসিন্দার। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় রায় বলেন, “দুর্ঘটনার পর থেকে অভিশপ্ত কামরাগুলিকে দেখে ভয় পেতেন গ্রামের বাসিন্দারা। ভয়ে রাতের অন্ধকারে কেউ রেল লাইন পারাপারও করত না। ভয় কাটাতে পুজো দিয়ে নাম-কীর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু অবস্থা একই ছিল। এখন এই কামরাগুলিকে কেটে ফেলার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। দিন রাত কাজ হচ্ছে। ফলে আর আতঙ্ক নেই। বরাত পাওয়া ফার্মের ম্যানেজার মণীশ গুপ্তা বলেন, “আমরা কাজ করার আগে পুজো দিয়েছিলাম। তাই কোনও ভয়ের ব্যাপার নেই। কাজ জোরকদমে চলছে।”