কলকাতা : রাস্তায় জল। তার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। সেই সময় রাস্তার পাশে পোস্টে হাত দিতেই ছিটকে পড়েছিল ১২ বছরের নীতীশ যাদব। জলে পড়েছিল প্রায় ঘণ্টাখানেক। তারপর তাকে উদ্ধার করে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা নীতীশকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রশ্ন উঠছে, এতক্ষণ ধরে জলে পড়ে না থাকলে কি বাঁচানো সম্ভব হত নীতীশকে ? হৃদরোগে চিকিৎসার মতো বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ক্ষেত্রেও কি গোল্ডেন আওয়ার রয়েছে? কী বলছেন চিকিৎসকরা ?
গতকাল দুর্ঘটনার পর নীতীশের মা আরতি যাদব বলেন, “প্রায় এক ঘণ্টা পর লাইট অফ করেছে। তারপর ওকে সরিয়েছে।” আগে উদ্ধার করলে নীতীশের বাঁচার সম্ভাবনা কি বাড়ত? জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, “দুর্ঘটনার পরই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে উদ্ধার করলে বাঁচার সম্ভাবনা বাড়ত।” তবে তাতেও একাধিক বিষয় রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, “তাৎক্ষণিক ভাবে বিদ্যুৎ শরীরের মধ্যে দিয়ে চলে গেলে কেউ মারা যান, কেউ আবার বেঁচে যান। যেমন বাজ পড়ার ঘটনায়। শরীরের মধ্য দিয়ে তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ প্রবাহ হয়।” নীতীশের ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, “রাস্তায় জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়ে গেলে নিরন্তর শরীরের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ হবে। কারণ, পুরো জল বৈদ্যুতিক ভাবে সক্রিয়। আবার রাস্তার জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে সাধারণ মানুষও তার কাছে পৌঁছতে পারবে না। বিদ্যুৎ দফতরের লোকও এসে প্রথমে বুঝতে পারবে না, কোথায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে হবে।”
গতকালের ঘটনার সময়ের একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে। যেখানে দেখা গিয়েছে, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে নীতীশ। পোস্টে হাত দেওয়ার পরই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় সে। হরিদেবপুরের ঘটনা নিয়ে আজ বৈঠকে বসেছিল কলকাতা পুরনিগম। ওই বৈঠকের পর মেয়র পারিষদ তারক সিং বলেন, “জলে অতটা হেঁটে গেল সে। তার মানে জলে ছিল না বিদ্যুৎ।” সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনার পরই হাসপাতালে নিয়ে গেলে বাঁচার সম্ভাবনা থাকত নীতীশের।
হরিদেবপুরে ১২ বছরের কিশোরের মৃত্যু নিয়ে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হওয়ার কথা বললেন চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তিনি বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর কী করতে হবে, সেটাও শেখানো দরকার সাধারণ মানুষকে। উদ্ধারকারী দল আসার আগে কী করতে হবে, সেটা জানা দরকার সাধারণ মানুষের।”