কলকাতা: ১০ দিনে চারবার বাংলায় পা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোটের মুখে জনসভা হয়েছে আরামবাগ, কৃষ্ণনগর, বারাসতে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোমর বেঁধে নির্বাচনী প্রচারে নামতে দেখা যায়নি। এবার তাই শুরু হতে চলেছে ব্রিগেডের জনজগর্জন সভার হাত ধরে। বিগত কয়েকদিন ধরেই জোরকদমে যার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল ঘাসফুল শিবিরের অন্দরে। এই প্রথম তৈরি হয়েছে র্যাম্প। থাকছেন তৃণমূলের প্রায় ৬০০ জন নেতা-নেত্রী। এখন সেখান থেকে মমতা-অভিষেক কী বার্তা দেন সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।
কোচবিহার- জগদীশ বাসুনিয়া
আলিপুরদুয়ার- প্রকাশ চিক বড়াইক
জলপাইগুড়ি- নির্মলচন্দ্র রায়
দার্জিলিং- গোপাল লামা
রায়গঞ্জ- কৃষ্ণ কল্যাণী
বালুরঘাট- বিপ্লব মিত্র
মালদহ উত্তর- প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
মালদহ দক্ষিণ- শাহনওয়াজ আলি রহমান
জঙ্গিপুর- খলিলুর রহমান
বহরমপুর- ইউসুফ পাঠান
মুর্শিদাবাদ – আবু তাহের খান
কৃষ্ণনগর- মহুয়া মৈত্র
রাণাঘাট- মুকুটমনি অধিকারী
বনগাঁ- বিশ্বজিৎ দাস
ব্যারাকপুর- পার্থ ভৌমিক
দমদম- সৌগত রায়
বারাসত- কাকলি ঘোষ দস্তিদার
বসিরহাট- হাজি নুরুল ইসলাম
জয়নগর- প্রতিমা মণ্ডল
মথুরাপুর- বাপি হালদার
ডায়মন্ড হারবার- অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়
যাদবপুর- সায়নী ঘোষ
কলকাতা দক্ষিণ- মালা রায়
কলকাতা উত্তর- সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
হাওড়া- প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
উলুবেড়িয়া- সাজদা আহমেদ
শ্রীরামপুর- কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
হুগলি- রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়
আরামবাগ- মিতালি বাগ
তমলুক- দেবাংশু ভট্টাচার্য
কাঁথি- উত্তম বারিক
ঘাটাল- দেব
ঝাড়গ্রাম- কালীপদ সোরেন
মেদিনীপুর – জুন মালিয়া
পুরুলিয়া- শান্তিরাম মাহাত
বাঁকুড়া- অরূপ চক্রবর্তী
বর্ধমান পূর্ব- ড. শর্মিলা সরকার
বর্ধমান দুর্গাপুর- কীর্তি আজাদ
আসানসোল- শত্রুঘ্ন সিনহা
বোলপুর – অসিত মাল
বীরভূম- শতাব্দী রায়
আপনাদের আধার কার্ড কেড়ে নিয়েছিল, আমার গর্জন শুনে থমকে গেল। ইলেকশনের আগে আপনাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে চাইবে, আমরা হতে দেব না। এনআরসি হতে দেব না: মমতা
মমতা বলেন, “১৮ জনকে সাংসদ করেছিলেন। কেন্দ্র ধরে দেখুন কী কাজ হয়েছে। যে মেট্রো উদ্বোধন করছেন, সেটা আমার করে দেওয়া, উনি ফিতে কাটছেন। টাকাও আমার দিয়ে আসা। বাংলার সব বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ফেরত দিচ্ছে না। আমরা পথশ্রী করে দিয়েছি। গঙ্গসাগর সেতু, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান সহ সব প্রজেক্ট আমরাই করব।”
১০০ দিনের কাজ নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, “টাকাই তো দাওনি, খাবে কোথা থেকে? জিজ্ঞেস করুন, ২১-২২, ২২-২৩ অর্থবর্ষে ১০০ দিনে র কোনও টাকাই দেয়নি ১০০ দিনের কাজের। ৫৯ লক্ষ লোককে টাকা আমরা দিয়েছি, আপনারা দেননি। না দিয়েই বলছেন খেয়ে ফেলেছে।”
আবাস যোজনা নিয়েও সরব মমতা। বলেন, “মোদী বাবু কথা বলছেন কিছু অফিসারের কথায়। তথ্যটা যাচাই করে নিন। ৪৩ হাজার বাড়ি আমরা তৈরি করে দিয়েছিলাম। ১১ লক্ষ মানুষকে বাড়ি দেননি। ১ মে-র মধ্যে টাকা না দিলে, বাড়ি আমরা তৈরি করে দেব।”
গ্যাসের দাম নিয়ে মোদী সরকারকে কটাক্ষ মমতার। বলেন, “কখনও দেখেছেন নিজের লেজ নিজেই কাটছে, গাছের ডালে বসে নিজেই কাটছে? গ্যাসের দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ১০০০ টাকার গ্যাসে ফুটছে বিনা পয়সার চাল। ভোট এলে ১০০ টাকা কমবে আর ভোট চলে গেলে ১০০০ টাকা বাড়বে গ্যাসের দাম। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা পকেটে ভরেছে। মনে ছিল না গরিব মানুষের কী হবে?”
মমতা বলেন, “গতকাল ইলেকশন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন। বাংলার ওপর সন্ত্রাস চালানোর যে প্রচেষ্টা চলছে, তা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাঁকে আমরা স্যালুট জানাই। জেনে রাখবেন, কেন্দ্রীয় সরকারই ভোট পরিচালনা করছেন।”
বক্তব্য শুরু করার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি নেমে সবার মাঝে যেতে চাই।” এ কথা বলে র্যাম্পে হেঁটে যান মমতা। উপস্থিত জনগণের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়েন তিনি।
আবাসের টাকা নিয়ে তীব্র আক্রমণ অভিষেকের। চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বাংলায় এসে বলে গিয়েছেন বাংলার আবাসের জন্য ৪২ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন। গত ৩ বছরে মোদী সরকার যদি প্রমাণ করতে পারে আবাসের একটা টাকা দিয়েছে, তাহলে আমি রাজনীতি থেকে অবসর নেব, আপনারা যা শাস্তি দেবেন, তা মাথা পেতে নেব। শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে বিজেপিকে।”
বিচারপতি প্রসঙ্গে আক্রমণ অভিষেকের। বললেন, “আমি বিচারপতি নিয়ে কিচ্ছু বলব না। শুধু বলব আগে আমাদের দেশে কেউ চুরি করলে বা খুন করে বিচারপতিরা তাঁদের জেলে পাঠাতেন। আজ মোদীজির ভারতে চোরেরা, খুনিরা বিচারপতিদের উত্তরীয় পরিয়ে দলে স্বাগত জানাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে জবাব দিন।”
অভিষেক বলেন, “বিবেকানন্দ না থাকলে, বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে গিয়ে বাংলার মাথা উঁচু করার মতো সন্ন্যাসীকে ভারত পেত না। নেতাজি না থাকলে আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি করে ব্রিটিশদের নাড়িয়ে দিতেন না কেউ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর না থাকলে নিজের নামটাও বাংলায় লিখতে পারতেন না। রাম মোহন রায় না থাকলে সতীদাহ প্রথা কোনও দিন বন্ধ হত না। মমতা না থাকলে আজও বাংলার কোটি কোটি মানুষকে, বিশেষত জঙ্গলমহলের অত্যাচারিত মানুষকে সিপিএম আর মাওবাদীদের বন্দুকের নলের কাছে মাথা নত করে বাঁচতে হত।”
বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় নেতাদের কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, “যারা আমাদের কথা বুঝতে পারে না, তারা আমাদের মনে ভাষা কী করে বুঝবে। যে বাংলা বলতে পারেন না, লিখতে পারেন না, শুনতে পারেন না, যে বাংলাকে বাংলাদেশি বলেন, তার থেকে গ্যারান্টি নেবেন?” অভিষেক আরও বলেন, “মোদী কতবার বাংলায় এসেছেন? আসেননি কারণ বাংলা আপনার কাছে মাথা নত করেননি।”
অভিষেক বলেন, “আগে চোর চুরি করে জেলে যেত, এখন চুরি করে বিজেপিতে যায়। এটাই মোদীর গ্যারান্টি। ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে এ কথা বলেন অভিষেক। তিনি বলেন, ১৫ লক্ষ টাকা দেননি কাউকে, মোদীর জিরো গ্যারান্টি। আর একজন টালির চাল থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছিলেন। ১২ বছর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও আজও সেই টালির চালে থেকে, হাওয়াই চপ্পল পরে ১০ কোটি মানুষের উন্নয়নের ধারা পরিচালনা করছেন। আপনি কার গ্যারান্টিতে বিশ্বাস করেন?”
শুভেন্দু সহ বিজেপি কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, “বাংলাকে গালি দেওয়ায় কাউকে বিরোধী দলনেতা করা হয়েছে, কাউকে বিধায়ক থেকে সাংসদ পদে উন্নীত করা হয়েছে। একজন অভিনেতা বিভিন্নভাবে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন তাঁর কাজের মধ্যে, তাঁকে আসানসোলের প্রার্থী করা হয়েছিল বিজেপির তরফে। পরে তিনি নিজেই বলেছেন, প্রার্থী হব না। এটাই বাংলার ক্ষমতা, বাংলার শক্তি।”
কেন্দ্র বিরোধিতায় সরব অভিষেক। বললেন, “তৃণমূল কথা দিয়ে কথা রাখে। নবজোয়ারের সময় বলেছিলাম, আপনি ১০০ দিনের টাকাকে সামনে রেখে ভোট দিন, টাকা আপনারা পাবেন। মানুষ ভোট দিয়েছেন। ৬ মাসের মধ্যে ১০০ দিনের টাকার ব্যবস্থা আমরা করেছি। আজ যে কর্মসূচি আমরা ঘোষণা করতে চলেছি, তার নাম জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন।”
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে অভিষেক বলেন, “আজকের ব্রিগেড সমাবেশ তৃণমূলের সমাবেশ নয়, ৫৯ লক্ষ শ্রমিক যাদের টাকা আটকে রাখা হয়েছিল তাদের সমাবেশ, গরিব খেটে খাওয়া মানুষের ব্রিগেড। ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার প্রকৃত প্রাপক যাদের মাথার ওপর ছাদ প্রয়োজন। আজ তাঁদের ব্রিগেড। বাংলার আপামর জনসাধারণের ব্রিগেড, তফশিলি জাতি-উপজাতির ব্রিগেড।”
বিজেপিকে জবাব দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অনেকে অনেক রকম কথা বলছিল। কেউ বলছিল তৃণমূল দল একে একে ছেড়ে চলে যাচ্ছে… দলটাই থাকবে না। কেউ বলছিল সাফ হয়ে যাবে, কেউ বলছিল ধুয়ে মুছে যাবে। বিগত ১৫-২০ দিনে বহিরাগত নেতারা অনেক বক্তৃতা দিয়েছেন বাংলার মাটি থেকে। এদের কাছে টাকা আছ, ইডি আছে, সিবিআই আছে। আর তৃণমূলের কাছে মানুষ আছে। একটা লড়াই হোক রাষ্ট্রশক্তির কাছে মানুষ জেতে কি না দেখা হোক।”
তৃণমূলের জনগর্জন সভাকে ঘিরে উৎসবের পরিবেশ বাবুঘাট চত্বরে। জঙ্গলমহলের আদিবাসী মহিলা-পুরুষদের ধামসা মাদলের তালে নাচতে দেখা গেল। ব্রিগেডেও নৃত্য পরিবেশন করবেন তাঁরা।
ব্রিগেডের ময়দানে যেন পিকনিকের মেজাজ। তৃনমূলের সভার ডিম ভাত এর আয়োজন ব্রিগেড ময়দানেও। ৫০ টাকার বিনিময়ে দেদার বিকোচ্ছে ডিম – ভাত। এছাড়াও পরোটা, ফ্রুট স্যালাডেও মজেছেন কর্মীরা। সভা শুরু হতে যেহেতু এখনো বেশ খানিকটা সময় বাকি, তাই ভরপেট খাওয়া দাওয়া করে ,ময়দানের রোদ থেকে বাঁচতে গাছের নীচে জিরিয়েও নিচ্ছেন কেউ কেউ।
সকাল থেকে বর্ধমান স্টেশন চত্বরে জমায়েত বাড়ছে তৃণমূল কর্মীদের।মূলত বর্ধমান শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকার তৃণমূল কর্মীরাই স্টেশনে আসছেন। স্টেশন চত্বরে খোলা হচ্ছে সহায়তা কেন্দ্র। তৃণমূল কর্মীদের টিফিন, জল ও ব্যাচ দেওয়া হচ্ছে।
২৯টি মিছিল সোজা ব্রিগেডে আসার কথা। সব মিছিলেই থাকছে পুলিশি নজরদারি। হাওড়া স্টেশন, শিয়ালদহ স্টেশন, হাজরা স্টেশন, ইনডোর স্টেডিয়াম, শ্যামবাজার সহ বিভিন্ন জায়গায় থেকে বড় বড় মিছিল আসার কথা রয়েছে।
বিগ্রেড সভা স্থলের আশপাশে ৩ জন যুগ্ম কমিশনার ও ২১ জন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার থাকছেন বলে খবর। একইসঙ্গে থাকছে QRT, ১১টি অ্যাম্বুলেন্স ও দমকলের ৪ ইঞ্জিন।
তৃণমূলের জনগর্জন সভা যেন আদপেই হাইটেক সভার চেহারা নিয়েছে। RAMP ছাড়াও বিশেষ ব্যবস্থা গোটা ব্রিগেড ময়দান জুড়ে। সমগ্র ব্রিগেড ময়দানকে ঘিরে ফেলা হয়েছে এলইডি স্ক্রিন দিয়ে। মঞ্চের ব্যাকড্রপ ও এলইডি স্ক্রিন।
ব্রিগেড সমাবেশের জন্য ১৬০০ পুলিশ প্রস্তুত থাকছে। ৩০০ অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদা অফিসার, ইনস্পেকটর, সাব-ইনস্পেকটর থাকছে বলে খবর।