কমলেশ চৌধুরী: মার্চে নির্জলা কলকাতা। এক ফোঁটা বৃষ্টিও হয়নি। এপ্রিলে সবাই ভেবেছিল, পুষিয়ে দেবে প্রকৃতি। কিন্তু খ্যাপা প্রকৃতি যে অন্য অঙ্ক কষে রেখেছে, কে জানত! এপ্রিল শেষ হতে চলল, এখনও শুখা কলকাতা। দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ তল্লাটও। বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। কিন্তু তা-ও মে মাসের শুরু থেকে। তাহলে কী দাঁড়াল? মার্চ থেকে এপ্রিল, বৃষ্টিহীন কলকাতা।
১২২ বছরে একবারও নয়। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। সওয়া শতকে এ বারই প্রথম এমন অনাসৃষ্টি! এমন বঞ্চনা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের দস্তাবেজ তন্নতন্ন করে ঘেঁটেও ১২২ বছরে বাইশের পূর্বসূরির খোঁজ মিলছে না। বাইশে এপ্রিল কলকাতা বৃষ্টিহীন। ১৯০১ সালের পর থেকে এরকম মাত্র দু’বার হয়েছে। ১৯৬০ আর ১৯৯৯ সালে। ১৯৩৮, ২০০৯, ২০১৪ আর ২০১৬ সালেও বৃষ্টি না হওয়ার মতোই অবস্থা ছিল। ছিটেফোঁটা ঝরে আলিপুরে। এর মধ্যে আবার শেষ তিনটি বছর এপ্রিলে ভয়াবহ গরমের সাক্ষী হয়েছিল কলকাতা, দক্ষিণবঙ্গ। এ বার যা গরম, তার চেয়েও বেশি। অর্থাত্, বৃষ্টি না হওয়া মানেই দহন-দাপট।
কলকাতায় বৃষ্টিহীন মার্চের সংখ্যা অবশ্য এপ্রিলের চেয়ে বেশি। গত শতাব্দীতে ৯ বার আর চলতি শতাব্দীতে ৪ বার। এর মধ্যে দুটো বছর একেবারে পর পর। একুশ আর বাইশ। ঘটনা হল, কোনও বছরই মার্চ-এপ্রিল একটানা বৃষ্টিহীন, এরকম হয়নি। অর্থাত্, মার্চে বৃষ্টি না হলে এপ্রিল পুষিয়ে দিয়েছে। নয়তো মার্চে বৃষ্টি হয়েছে, এপ্রিল নির্জলা। ঐতিহাসিক তথ্যে তাকানো যাক। যেমন ১৯৬০ সালে এপ্রিলে বৃষ্টি না হলেও মার্চে বৃষ্টি নেহাত কম হয়নি। ৪২ মিলিমিটার।
১৯০৯ সালে মার্চে বৃষ্টি হয়নি কলকাতায়। এপ্রিলে কত বৃষ্টি হয়েছিল? ১৫১ মিলিমিটার। ১৯৭১ সালেও একই প্রবণতা। মার্চের শূন্য প্রকৃতি পুষিয়ে দিয়েছিল এপ্রিলে। বৃষ্টি হয়েছিল ১৯৬ মিলিমিটার। স্বাভাবিকেরে চেয়ে তিন গুণেরও বেশি। ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে ২২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিও হয়েছে আলিপুরে। এবারের মতো কাছাকাছি অবস্থা ১২২ বছরে মাত্র এক বছরেই হয়েছে। তা-ও ২৩ বছর আগে। ১৯৯৯ সালে। মার্চে ছিটেফোঁটা (০.৫ মিলিমিটার) জুটেছিল। আর এপ্রিল শুকনো।
বাংলায় বাতাস-বিভ্রাট! মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির জন্য বঙ্গোপসাগর থেকে দখিনা-পুবালি বাতাস বইতে হয়। কিন্তু মার্চ থেকে এ পর্যন্ত মূলত দখিনা-পশ্চিমী বাতাস বইছে। যা সরাসরি উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে সেখানেই বৃষ্টি দিচ্ছে। তা ছাড়া, উত্তর-পশ্চিমের গরম বাতাসের দাপট বেশি থাকায় জলীয় বাষ্প থেকেও বিশেষ লাভ হয়নি। এখনও পর্যন্ত কখনই কালবৈশাখীর অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’
আশায় আবহাওয়া দফতর। কালবৈশাখীকে স্বাগত জানাতে ঠিক যেমন দরকার, তেমনই ঘুঁটি সাজাচ্ছে প্রকৃতি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বৃহস্পতিবার বলেন, ‘পয়লা মে থেকে পুবালি বাতাস ঢুকবে। আকাশ মেঘলা হবে। ঢুকবে প্রচুর জলীয় বাষ্প। ঝড়-বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হবে। ২, ৩ মে, এমনকী ৪ মে পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়তে পারে।’ ৩ মে খুশির ঈদ। তার আগেই শান্তির বৃষ্টি। এমনই আশা জাগাচ্ছে হাওয়া অফিস। অপেক্ষার অবসান হবে তো?