কলকাতা: আপাতত বঙ্গ জুড়ে শীতের (Winter) আমেজ। গত কয়েকদিন ধরে ক্রমেই নিম্নমুখী পারদ। তবে কতদিন স্থায়ী হবে শীত? তা নিয়ে সংশয়ে আবহবিদরা। এখানেই শেষ নয়, পরের পর ঘূর্ণিঝড় কেন ইদানিং বাংলার উপকূলে হানা দিচ্ছে তা নিয়েও বিশেষ পর্যবেক্ষণ চলছে। সব মিলিয়ে বঙ্গ শিয়র থেকে বৃষ্টি বিপদ এখনও কাটানো যাচ্ছে না।
হাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষণ
আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার কলকাতায় আরও বেশ খানিকটা পারদ পতন হয়েছে। এদিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে ২ ডিগ্রি কম। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি কম। বাতাসে সর্বোচ্চ আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৮ শতাংশ। আপাতত বেশ কিছুদিন থিতু হয়েছে শীত। সকালের দিকে ঘন কুয়াশা থাকলেও বেলায় ধীরে ধীরে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। রাতেও ক্রমেই কমছে তাপমাত্রা। জেলাগুলিতেও পারদ ক্রমেই নিম্নমুখী।
কিন্তু, ইতিমধ্যেই পূর্বাভাস অনুযায়ী, জেলাগুলিতে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। পশ্চিম মেদিনীপুরে সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ। দেখা নেই রোদের। শুরু হয়েছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও। শুধু মেদিনীপুর নয় বৃষ্টি হওয়ার কথা উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। ২২ জানুয়ারিও পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে। অন্যান্য জেলাগুলিতেও ওইদিন আকাশের মুখ ভার থাকতে পারে।
আলিপুর আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশ থাকবে ওই দুই দিন। রাতের তাপমাত্রার ক্ষেত্রে এখনই বিশেষ কোনও পরিবর্তন নেই বলেই জানিয়েছে হাওয়া অফিস। তবে দু’দিন পর থেকে রাতের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে। অর্থাৎ, শীত কমবে। উত্তরবঙ্গে রয়েছে বৃষ্টির সম্ভাবনা।
বিপদ কোথায়?
জলবায়ু বদলের চক্করে বাংলা কীভাবে ভুগতে পারে তা নিয়েও নানা মুনির নানা মত। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ‘হ্যাজার্ড অ্যাটলাস’-এও সেই প্রতিফলন ঘটেছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, জলবায়ু বদলের ইঙ্গিত তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে বাড়ছে ঝড়, বন্যা, অতিবর্ষণ, বজ্রপাত ও খরার বিপদও। গাঙ্গেয় বঙ্গের দুটি জেলায় যে খরার প্রকোপ দেখা যেতে পারে সে আশঙ্কার কথাও ওই রিপোর্টে উঠে এসেছে।
অ্যাটলাসে প্রকাশিত ১৯৬১ সাল থেকে ২০২০ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করলে ঘূর্ণিঝড়ের বিপদের তালিকায় রয়েছে দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর। এই তিন জেলায় রয়েছে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও। খরা দেখা দিতে পারে বীরভূম ও নদিয়ায়। অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা ও হাওড়া বাদে গোটা রাজ্যে।
কবে থেকে বঙ্গে শীত?
আবহবিদরা আরও জানিয়েছেন, আরও একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সম্প্রতি হানা দিতে চলেছে রাজ্যে। তার জেরে বঙ্গে ফের মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে শীত। ঝঞ্ঝার হানায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তাপমাত্রা প্রায় ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি বাড়তে পারে। সপ্তাহান্তেও বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই মিলবে না। শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বেশি বৃষ্টি হতে পারে। উত্তরে রয়েছে শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা।
পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সাধারণত কাশ্মীর থেকে ভারতে প্রবেশ করে। তার জেরেই উত্তর ভারতে তুষারপাত হয়। কিন্তু, সম্প্রতি একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে মধ্য ভারত হয়ে সরাসরি বঙ্গে প্রবেশ করছে। যার জেরে পিছু হটছে শীত। তাই আপাতত জাঁকিয়ে ঠান্ডা পরার সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছে হাওয়া অফিস।