কলকাতা: শাসক শিবিরের অন্দরে সম্প্রতি বিরোধ-বিতর্কের ছবি সামনে এসেছে। দলীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kalyan Banerjee) সঙ্গে তরজা নিয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। জানিয়েছেন, তিনিও নেত্রী বলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মানেন। বর্ষীয়ান সাংসদের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট দলে গণতন্ত্র রয়েছে এমন দাবিও করেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ (Abhishek Banerjee)। এ বার সেই মন্তব্যের বিরুদ্ধেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তোপ দাগলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
দিলীপের মন্তব্য
শুক্রবার দিল্লি যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে দিলীপ বলেন, “কে কার নেত্রী, কে কার নেতা এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। ড্যামেজ কি আর এইভাবে কন্ট্রোল করা যায়? মাথায় একদম ঘা হয়ে গিয়েছে। সর্বোচ্চ স্তরের নেতারা যেভাবে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করছেন তাতে এটা ড্যামেজ কন্ট্রোল হয় না। দলের যে কোনও শৃঙ্খলা নেই তা স্পষ্ট।”
অভিষেকের মন্তব্য
প্রসঙ্গত, গোয়া সফরে গিয়ে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানেই তাঁকে সাংসদ ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন করলে অভিষেকের সাফ উত্তর, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কাউকে নেত্রী হিসেবে মানেন না। এতে অসুবিধার কী আছে? তিনি তো ঠিকই বলছেন। আমিও বলছি আমার নেত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমিও বাকি কাউকে মানি না। উনি যদি আমার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তবে প্রমাণিত আমাদের দলে গণতন্ত্র আছে।”
এমনকী ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়েও কথা বলেন অভিষেক। বলেন, “আমি ডায়মন্ড হারবারে সেল্ফ টেস্টের ওপর জোর দিয়েছি। এর পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। আরটিপিসিআর সকালে করালে রিপোর্ট আসতে রাত হয়ে যায়। কখনও আরও বেশি সময় লাগে। ওমিক্রন যেহেতু বেশি সংক্রমক, তাই প্রশাসনিক বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে সেল্ফ টেস্টের ওপর বেশি জোর দেওয়া হবে। এরফলে ১০ মিনিটে করোনা রিপোর্ট পাওয়া সম্ভব হবে।”
কল্যাণের মন্তব্যে দানা বেঁধেছিল বিতর্ক
অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার মডেলকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণের অভিযোগ ছিল, আগামী দু’মাস নিজের লোকসভা কেন্দ্রে যাবতীয় অনুষ্ঠান বন্ধ করার ঘোষণা করে মমতা সরকারের বিরোধিতা করেছেন অভিষেক। মমতার সঙ্গে দীর্ঘ ৩৭ বছর থাকার কথা জানিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, মমতা ছাড়া আর কাউকে তিনি নেতা হিসেবে মানেন না। স্পষ্টতই ইঙ্গিত ছিল অভিষেকের দিকে।
কল্যাণের এই মন্তব্য সামনে আসার পর থেকে কল্যাণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন এক শ্রেণীর তৃণমূল নেতা কর্মীরা। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কল্যাণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। এমনকি অনেক জায়গায় কল্যাণের কুশপুতলও পোড়ান তৃণমূল কর্মীরা। ‘শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায়’ পোস্টে ছয়লাপ হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়া। বিরোধী দলগুলির তরফে দাবি করা হয়েছিল তৃণমূলে মমতা ও অভিষেকর মধ্যে চিড় ধরেছে।
তৃণমূল ও বিজেপির পর্যবেক্ষণ
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “অভিষেক নিজের কথা বলছেন। মমতা দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সন। এই নিয়ে আলোচনার কোনও অবকাশ নেই।” বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার জানিয়েছেন, “এটা একান্ত তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই নিয়ে বাইরের কারোর কথা বলার কোনও জায়গা নেই।”