কলকাতা: বিধানসভায় শাসক-বিরোধী শিবিরের ধস্তাধস্তি-হাতাহাতি। শুধু তাই নয়, ছেঁড়া হল জামা, নাক থেকে ঝরল রক্ত, হল গালিগালাজ, ডাকা হল অ্যাম্বুলেন্স। সোমবার সকালে বগটুই ইস্যুতে নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকে বিধানসভা। ঘটনার জেরে সাসপেন্ড হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সাসপেন্ড করা হয়েছে আরও চার জন বিজেপি বিধায়ককে। মনোজ টিগ্গা, দীপক বর্মা, নরহরি মাহাতো, শঙ্কর ঘোষকে সাসপেন্ড করা হয়। এদিনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পর বিধানসভায় পাঁচ বিজেপি বিধায়কের সাসপেন্ডের প্রস্তাব দেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “বিধানসভায় এই ধরনের ঘটনা গণতন্ত্রবিরোধী। বিধানসভার গরিমা নষ্ট করে।” এর প্রেক্ষিতে সাসপেন্ডের প্রস্তাব দেন ফিরহাদ হাকিম ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়। তারপরই পাঁচ বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয়।
ঠিক এখানেই বিজেপির প্রশ্ন। যেখানে দু’দলের বিধায়করাই ধস্তাধস্তি জড়ালেন, তাহলে কেবল বিজেপি বিধায়কদেরই বেছে বেছে কেন সাসপেন্ড করা হল? এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে ক্যামেরার সামনে শুভেন্দু অধিকারীর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তিনি এমনিতে জানিয়েছেন, তালিকা দেখলেই স্পষ্ট কাদেরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, রাজবংশীরা তৃণমূলকে ভোট দেননি, কুর্মি সম্প্রদায়ের মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেননি, ওবিসিদেরও একাংশ ভোট বিজেপির ঝুলিতে। যে বিজেপি বিধায়কদের সাসপেন্ড করা হয়েছে, সেই নাম খতিয়ে দেখলেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমার যা মনে হয়, সরকার চারদিক থেকে এত চাপে আছে, যে মানসিক স্থিতি ঠিক নেই। বিরোধীদের কীভাবে সামলাতে হয়, সেটাও তারা জানেন না। এখন শক্তি গিয়ে গায়ের জোরে আটকাবার চেষ্টা করছেন। এটা খুবই অনভিপ্রেত। এর আগে দুবছর আগে আমি যখন ছিলাম, তখন বিরোধী দলনেতা আহত হয়েছিলেন। তাঁর চোট লেগেছিল। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। আমার মনে হয় পরিস্থিতি আবার সেদিকে যাচ্ছে। সরকার তার ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছে।”
দিলীপ ঘোষের আরও বক্তব্য, “গতবার তো আব্দুল মান্নানকে মেরে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এবারে ওরা সেটা পারেননি। তাই সাসপেন্ড করে বিরোধীদের গলা টেপার চেষ্টা চলছে।”
সাসপেন্ডেড বিজেপি বিধায়ক নরহরি মাহাতোর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতির দাবি করেছিলাম আমরা। কিন্তু স্পিকার সেটার অনুমোদন দেননি। বিরোধী বিধায়কদের যেটা দায়িত্ব ও কর্তব্য, আমরা সেটাই করছিলাম। স্লোগান দিচ্ছিলাম। তখনই ট্রেজারি বেঞ্চের বিধায়করা আমাদের ওপর হামলা চালায়।”
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “আগে এখানে কিছু ভদ্র সভ্য রাজনীতিবিদ পৌঁছতেন, মানুষের কথা বলতেন, এখন আর সেটা হয় না। ওখানে গুতোগুতি হচ্ছে।”
সাসপেন্ডেড বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “আমি বলছি, আমি এটা বারবার করব। দ্বিতীয়ত আমি বিধানসভার ভিতরে এমন কিছু করিনি, যাতে সাসপেন্ড করা হবে। অধ্যক্ষ যা করেছেন, আমার মনে হয় সঠিক নয়। যাঁদেরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাঁরা এই ঝামেলায় জড়িত নন। যেহেতু আমরা ভিতরে বলি, আর যাতে না বলতে পারি, তার জন্য সাসপেনশন।”
ঠিক কী থেকে সমস্যার সূত্রপাত?
বগটুই ইস্যুতে এদিনের অধিবেশনের শুরুতেই বিজেপি বিধায়করা প্ল্যাকার্ড হাতে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে একটি নিরাপত্তারক্ষীদের একটি বেষ্টনী তৈরি করা হয়। এই বেষ্টনীর অগ্রভাগে ছিলেন মহিলারা। এরপরই দেখা যায়, বিজেপির মহিলা বিধায়করা ওই সমস্ত মহিলা নিরাপত্তারক্ষীদের বেষ্টনী ভাঙতে তৎপর হন। তাতেই শুরু হয় কার্যত ধস্তাধস্তি। ধস্তাধস্তির মাঝে পড়েন ফিরহাদও। তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে খবর। অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: জামা ছিঁড়ে কামড়ানোর চেষ্টা, হাতাহাতিতে ফিরহাদও! ‘লজ্জার’ ঘটনা বিধানসভায়… দেখুন ভিডিয়ো