কলকাতা: বিধায়কদের দলবদল ইস্যু নিয়ে ফের মুখর বিধানসভা (Assembly) কক্ষ। সোমবার অধিবেশনে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছিল। সেখানেও চলে এল দলবদলের খোঁচা। বক্তব্য রাখার সময় ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেন কথায় কথায় কটাক্ষ করে বলেন, ‘আপনারা বিধায়ক ধরে রাখতে পারছেন না?’ এরপরই শুভেন্দু অধিকারী বক্তব্য রাখতে উঠে বলেন, ‘এখানে বিধায়ক বলছেন যে আপনারা বিধায়ক ধরে রাখতে পারছেন না। আর অধ্যক্ষ বলছেন মুকুল রায় বিজেপিতে আছেন।’ এরপরই পাল্টা অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আপনি তো কোর্টে গিয়েছিলেন। আপনি কোর্টে যেতে পারেন।’ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির দলবদলের বিড়ম্বনা গত কয়েকমাসে ভালই টের পেয়েছে রাজ্যের বিরোধী শিবির। কিছুদিন আগেই বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল এসেছিলেন কলকাতায়। ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে গিয়ে তৃণমূলের উত্তরীয় গলায় পরেন তিনি। সুমনের এই দলবদলের বিষয় নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয় বঙ্গ রাজনীতিতে। সুমনের আগে আরও পাঁচ বিধায়কের শিবির বদল নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
যে প্রশ্নের প্রথম উদ্রেক হয়েছিল ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর, কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়ের হাত ধরে। তৃণমূল ভবনে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। যদিও এরপর মুকুল রায়ের এই তৃণমূলে ‘ঘরওয়াপসি’ নিয়ে কম রাজনৈতিক টানাপোড়েন হয়নি। এই টানাপোড়েন তুঙ্গে ওঠে, যেদিন বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদে তাঁকে মনোনীত করা হয়।
প্রথম থেকেই বিজেপি পরিষদীয় দলের বক্তব্য ছিল, পিএসি নিয়ে তাদের বঞ্চনা করা হয়েছে। রীতি ভাঙা হয়েছে বিধানসভার। যে পিএসির চেয়ারম্যান বাছাই করা হয় বিরোধী শিবির থেকে, সেখানে কেন মুকুল রায়কে পদাধিকারী করা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু অধিকারীরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, মুকুল রায় বিজেপি ছেড়েছেন। তাই এই পদে তাঁর বসার এক্তিয়ারই নেই। এ নিয়ে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট অবধি যায় বিজেপি।
যদিও বিধানসভার অধ্যক্ষ বারবারই জানিয়েছেন, এই দাবির সপক্ষে কোনও যুক্তি নেই। মুকুল রায় বিধানসভায় বিজেপিরই বিধায়ক। আর বাইরে কে কী করছেন তা তাঁর দেখার বিষয় নয়। এসবের মধ্যে গত জুনে পিএসির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরেও দাঁড়ান মুকুল রায়। শারীরিক অসুস্থতার জন্য সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে জানান। এরপর তৃণমূলের একাধিক মঞ্চে মুকুল রায়কে দেখাও গিয়েছে।
পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়, রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী, বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ তৃণমূলে যোগ দেন। এই যোগদানগুলি নিয়েও বিরোধী দলনেতা সরব হন। অধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। যা নিয়ে এখনও অধ্যক্ষের ঘরে শুনানি চলছে। বিধায়কের দল বদল এবং দলত্যাগ বিরোধী আইন নিয়ে বিজেপি যতবার সরব হয়েছে, পাল্টা তৃণমূল তুলে এনেছে শিশির অধিকারী, দিব্যেন্দু অধিকারীদের প্রসঙ্গ। তৃণমূলের টিকিটে জিতেও তাঁরা বিজেপির মঞ্চে থেকেছেন বলে কটাক্ষ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগ হলে, তা সবার জন্যই হওয়া প্রয়োজন। সেই দলত্যাগের তরজা এদিন শোনা গেল বিধানসভাতেও।