সহযোগিতা নয়, বিধানসভায় সংঘাতের ইঙ্গিত বিজেপির, সংশোধিত প্রস্তাবে রাজ্যপাল-কমিশন স্তুতি

West Bengal BJP: ধন্যবাদ জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে।

সহযোগিতা নয়, বিধানসভায় সংঘাতের ইঙ্গিত বিজেপির, সংশোধিত প্রস্তাবে রাজ্যপাল-কমিশন স্তুতি
অলংকরণ-অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Jun 30, 2021 | 12:15 AM

কলকাতা: বৈঠক এক, কিন্তু তার আঙ্গিক ছিল অনেক। মঙ্গলবার হেস্টিংসের বিজেপি কার্যালয়ে কার্যকারিণী সভার আয়োজন করা হয়। এবং সেই বৈঠকে যে একগুচ্ছ রাজনৈতিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, তা বাংলার পরবর্তী রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এ দিনের বৈঠকে বিজেপির পেশ করা প্রস্তাব দেখে অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।

প্রথমত, আজকের বৈঠকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে এ বার শুভেন্দু অধিকারীও বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কার্যত একাসনে বসবেন। দ্বিতীয়ত, আরও একটি বিষয় পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে, আসন্ন সময় বিধানসভার অন্দরে সহযোগিতা তো দূর, বরং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সংঘাতের পথেই হাঁটবে পদ্ম। তবে এই সবকিছুকে ছাপিয়ে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে বিজেপির সংশোধিত প্রস্তাবে। সেখানে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে।

বঙ্গ বিজেপির আজকের রাজনৈতিক প্রস্তাবে উঠে আসে ভোট পরবর্তী হিংসার প্রসঙ্গ। রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনাকে ‘ভারতীয় গণতন্ত্রের এক লজ্জাময় অধ্যায়’ বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়। দেশভাগের পর এই ধরনের ‘নারকীয় ঘটনা আর ঘটেনি’ বলেও উল্লেখ করেছে বঙ্গ বিজেপি। এর পাশাপাশি ভুয়ো আইএএস তথা জাল টিকা-কাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জন দেবের কথা উল্লেখ করে টিকা বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে।

এর পাশাপাশি বিজেপি ত্যাগী মুকুল রায়ের নাম না করেই তাঁর নাম পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে টিপ্পনী করেছে বিজেপি। লেখা হয়েছে, বিধানসভার অধ্যক্ষ ‘কোনও অদৃশ্য কারণে’ দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগ করেননি। একই সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, “বিভিন্ন পরিষদীয় কমিটি গঠনে সাংবিধানিক পরিকাঠামো ভেঙে গা-জোয়ারি মনোভাবের প্রবণতা দেখাচ্ছে শাসকদল।” বিজেপি হুঁশিয়ারি, “এমন চলতে থাকলে গঠনমূলক সহযোগিতার বদলে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়বে।”

আরও পড়ুন: হারা আসনে ময়নাতদন্তের পক্ষে শুভেন্দু, সঙ্গে একাধিক পরামর্শ নেতাদের

তবে উপরিউক্ত বিষয়গুলির থেকেও রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি অনেকাংশে বেশি আকর্ষণ করেছে নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যপালে ভূমিকা নিয়ে বিজেপির স্তুতি। রাজনৈতিক প্রস্তাবের সংশোধনীতে রাজ্যপাল প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, “রাজ্যের মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে এবং তাঁদের অধিকার যাতে ক্ষুণ্ন থাকে তার জন্য যে ভূমিকা রাজ্যপাল নিচ্ছেন তা প্রশংসনীয়।” অন্যদিকে কমিশনকে ধন্যাবাদ জ্ঞাপন করে লেখা হয়, “নির্বাচন কমিশন নানা বাধা-বিঘ্নের মধ্যে যেভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছে, তাতে তাদের ধন্যবাদ প্রাপ্য।” একইসঙ্গে ওই সংশোধনীতে এ কথাও বলা হয়েছে, “কোভিডের পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন কমিশন যে ভূমিকা নিয়েছিল তাতে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ সুবিধা হয়েছে। মানুষ তাঁর মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে।”

একটি রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবে একজন সাংবিধানিক প্রধান ও একটি স্বশাসিত সংস্থাকে ধন্যবাদ দেওয়া ও প্রশংসার এই চিত্র কিছুটা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একটা বড় অংশ।

আরও পড়ুন: ‘পরের ভোটে সরকার গড়বে বিজেপি’, দিলীপদের পেপটক নাড্ডার, মিমিকে টেনে খোঁচা রাজ্যকে