কলকাতা: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেও সাম্প্রতিক আধার-ইস্যুতে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘আমরা আধারে বিশ্বাস করি না। আধার কার্ড নিয়ে যে জঘন্য চক্রান্ত হল, সে চক্রান্তটা আমরা রুখে দিলাম।’ ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় বাংলার ভাবাবেগে শান দেওয়ার চেষ্টা দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। ‘চক্রান্ত’ রুখে দেওয়ার কথা বলে মমতা স্মরণ করিয়ে দিলেন, ‘এটা বাংলা। এটা অন্য জায়গা নয়, এটা মাথায় রাখবেন।’ মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘সূর্য যখন উদিত হয়, আমাদের বিবেক তখন জাগ্রত হয়। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে এক সেকেন্ড লাগে।’
গত কয়েকদিন ধরেই আধার কার্ড ঘিরে এই রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়েছে বাংলায়। একাধিক জেলায় আধার ‘ডিঅ্যাক্টিভেট’-এর অভিযোগ ঘিরে বিভ্রান্ত ছড়িয়েছিল আমজনতার মনে। রাজ্যবাসীর উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা দূর করতে আশ্বস্তও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, প্রয়োজনে বিকল্প কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে। মমতা আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘যাঁদের কার্ড নিয়ে এই সমস্যা হচ্ছে, তাঁদের আমরা আলাদা কার্ড দেব। অলটারনেটিভ কার্ড দেব, বিকল্প কার্ড।’
বিশেষ করে আধার ঘিরে এই বিতর্ক শুরু হওয়ার পর থেকে আমজনতার মধ্যে সংশয় জেগেছিল বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা পাওয়া নিয়ে। সেই নিয়েও আশ্বস্ত করে মমতা বলেছিলেন, ওই বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে সব সরকারি সুবিধা পাওয়া যাবে। এদিকে মমতার সেই ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে নালিশ জানিয়েছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর অভিযোগ ছিল, মমতা যে বিকল্প কার্ডের কথা বলছেন তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
প্রসঙ্গত, মতুয়া অধ্যুষিত বাগদায় হেলেঞ্চা এলাকাতেও বেশ কয়েকজন এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে আসছে। আজ ভাষা দিবসের মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘সমস্ত মতুয়াদের থেকে আধার কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেটেড করে দেওয়া হয়েছে। কোন অধিকারে? একটা লোক জানতে পারল না তাঁর কী অপরাধ!’ যদিও ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির সদস্য তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর আগেই আশ্বস্ত করেছেন, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে এবং খুব শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
আজ ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, ‘এটা রাজনীতির খেলা, ভোটের খেলা। আমি ভোটের অঙ্কে বিশ্বাস করি না। আমি মানবিকতার অঙ্কে বিশ্বাস করি। অধিকারের অঙ্কে বিশ্বাস করি।’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলার অধিকার, মর্যাদা কীভাবে রক্ষা করতে হয়, তা আমরা জানি। আমরা মাথা নত করতে জানি না। আমরা মাথা উঁচু করে চলি। এটা বাংলা বার বার প্রমাণ করেছে।’