আজ মহাষষ্ঠী। দেবীর বোধন। সকাল থেকেই উৎসবমুখর কলকাতা থেকে জেলা। গলি থেকে রাজপথে শুধুই মানুষের ভিড়। বেলা যত বেড়েছে প্যান্ডেলগুলিতে লাইন চওড়া হয়েছে। অতিমারির বিপদ কাটিয়ে দু’বছর পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে মানুষ। তারই উদযাপন বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে। পুজোয় এবার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যা নামতেই বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টিতে ভেজে কলকাতা, ভেজে একাধিক জেলাও। তবে ছাতা মাথায় দিয়েই ভিড় করেছেন দর্শনার্থীরা। সাড়ে ৮টা নাগাদ বৃষ্টি থামতে আরও ভিড়।
মহাষষ্ঠীর রাতে বৃষ্টি থামতেই ভিড় দক্ষিণ কলকাতায় অন্যতম চর্চিত ম্য়াডক্স স্কোয়ারে। শিশু কোলে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে মা।
শিলিগুড়ি শাস্ত্রীনগরে পুজোর উদ্বোধনে ববিতা সরকার। সঙ্গে বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ।
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টি। তাতে জল জমে গেল সিআর অ্যাভিনিউয়ের রাস্তায়।
এবার পুজো উদ্বোধনে দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারীকে একইসঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গেল। পশ্চিম মেদিনীপুরে হাতে হাত ধরে ফিতা কেটে পুজোর উদ্বোধন করলেন তাঁরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় বিধানসভা কেন্দ্রের দেউলি হাসপাতাল রোড সর্বজনীন দুর্গোৎসবের উদ্বোধন করেন মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ ও রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
ডুয়ার্সের অন্যতম বিগ বাজেটের পুজো ধূপগুড়ি বটতলা ভক্তসংঘের পুজো । এ বছর তাদের পুজোর থিম ধামসা মাদল। আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাদ্যযন্ত্র ধামসা মাদলকে থিম করে এই পুজোমণ্ডপ করা হয়েছে। এ বছর ৬৮ তম বর্ষে পদার্পণ করল ভক্ত সংঘের দুর্গাপুজো। গোটা পুজোমণ্ডপকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের মডেল দিয়ে। বাদ্যযন্ত্রের বিভিন্ন মডেল তৈরি করা হয়েছে।
উৎসবকে ব্যবহার করে বঙ্গ রাজনীতির বিভিন্ন দিককে তুলে ধরেছে সিপিআইএম। কখনও কাশফুল, কখনও বা ঢাক অথবা বর্ণপরিচয় – উৎসব পর্বেও রাজ্য সরকারকে নিশানা করার কোনও অস্ত্র বাদ রাখতে চায় না তারা। উৎসবের ক’দিন সরাসরি রাজনীতির ময়দানে যাওয়া সম্ভব নয়, তা বিলক্ষণ জানেন সেলিম, সুজনরা।
সে কারণে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছেন তাঁরা।
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বৃষ্টি শুরু কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়। একদিকে পুজো মণ্ডপগুলিতে মানুষের ভিড়, বাইরে অঝোর বৃষ্টি। একডালিয়া থেকে শ্রীভূমি দেখা যাচ্ছে সেই ছবিই।
মধ্য হাওড়ার ইছাপুর শিবাজি সংঘের এবারের পুজো ৪৯তম বর্ষে পা দিল। তাদের থিম ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ ।আইসক্রিম ক্যান্ডি, লজেন্স, খেলনা ও নানান রকমের ছোটবেলার পছন্দের জিনিস দিয়ে তৈরি এই পুজোমণ্ডপ এক টানে আপনাকে পৌঁছে দেবে শৈশবের হারানো দিনে। দেবী দুর্গাকে এখানে স্বপ্নের ফেরিওয়ালার রূপ দেওয়া হয়েছে।
পুরুলিয়া জেলার মধ্যে থিম পুজোয় অন্যতম শ্রেষ্ঠ দুলমি সর্বজনীন দুর্গাপুজো। বর্তমান জীবনে পলিথিনের দূষণ হল সভ্যতার অন্যতম অপশক্তি। দূষণের সেই ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে এখানকার মণ্ডপে। প্রথম দিন থেকেই মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে এই মণ্ডপ।
ষোলো আনা বাঙালিয়ানাকে জলপাইগুড়ি বামনপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো এবার থিম করেছে। তাদের পুজো ৭১ তম বছরে পড়ল। ১০ লক্ষ টাকার পুজোর বাজেট। ঘট, মুচি, ঘণ্টা, ঝুড়ি, ধুনুচির মতো দশকর্মার বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে এবার তারা তাদের পুজো প্যান্ডেল সাজিয়ে তুলেছে। প্রতিমাতেও অভিনবত্ব।
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় পুজোর ভিড় লেকটাউনমুখী। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের এবারের পুজোর থিম ভ্যাটিকান সিটি।
কলকাতা ‘শ্রী’ সেরার সেরা গড়িয়াহাট হিন্দুস্তান ক্লাব, সুরুচি সংঘ, টালা প্রত্যয়, হাতিবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।
কলকাতা ‘শ্রী’ সেরা পুজো চোরবাগান সর্বজনীন, রাজডাঙা নবোদয় সংঘ, বড়িশা ক্লাব, ৯৫ পল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।
কলকাতা ‘শ্রী’ সেরা প্রতিমা অজেয় সংহতি, বকুল বাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব, বেলেঘাটা ৩৩ পল্লিবাসী বৃন্দ, ২৫ পল্লি ক্লাব খিদিরপুর।
কলকাতা ‘শ্রী’ সেরা শৈল্পিক উৎকর্ষ ঠাকুরপুকুর স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক সর্বজনীন, নবীন পল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব হাতিবাগান, কালীঘাট মিলন সংঘ, হিন্দুস্তান পার্ক সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।
কলকাতা ‘শ্রী’ সেরা পরিবেশ বালিগঞ্জ সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি (দেশপ্রিয় পার্ক), একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাব, ৪১ পল্লি ক্লাব, আহিরীটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি।
কলকাতা ‘শ্রী’ সেরা সুরক্ষিত পুজো তেলেঙ্গাবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, সমাজসেবী সংঘ, খিদিরপুর পল্লি শারদীয়া, দক্ষিণ কলকাতা সর্বজনীন দুর্গাপুজো (প্রিয়নাথ মল্লিক রোড)
কলকাতা ‘শ্রী’ সেরা সম্ভাবনা আলিপুর সর্বজনীন, গল্ফগ্রিন শারোদৎসব কমিটি, যোধপুর পার্ক শারদীয়া উৎসব কমিটি, আলিপুর ৭৮ পল্লি
নিজের হাতে দুর্গার মূর্তি গড়ে ও নিজেই পুজো করে। এমনই ভাবে মা দুর্গার পুজো করে আসছেন খড়ার পৌরসভার বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র পৃথ্বীরাজ মল্লিক।
থিম সিলেকশন থেকে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, রাতদিন ভুলে মাতৃমণ্ডপ গড়ে তোলা, শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ার অসামান্য হয়ে পুজো। সেরা বারোয়ারি পুরস্কারে সেরা মণ্ডপ বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছে কলকাতার তিনটি পুজো। তারমধ্যে ঠাকুরপুকুর স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক সর্বজনীন, দমদম তরুণ দল, ৯৫ পল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি রয়েছে।
পানিহাটির উদয়ন সংঘের পুজোর ভাবনা যাত্রা পাড়া। পুরানো দিনের অবলুপ্তি পথে যাত্রা সংস্কৃতিকে ফের দর্শকদের নজর ঘোরাতে এমন ভাবনা পুজো উদ্যোগক্তাদের।উত্তর কলকাতার যাত্রাপাড়া যে চাল চিত্র ছিল, সেই দৃশ্যই হুবহু ফুটে উঠেছে মণ্ডপে।চিৎপুর এলাকার ট্রাম, টানা রিক্সা, চায়ের দোকান, ব্যান্ড পার্টিদের আড্ডা, বিভিন্ন যাত্রা কোম্পানির অফিস এবং টিকিট কাউন্টারের চিত্র তুলে ধরেছে মণ্ডপে।
এবার বিজেপির দুর্গাপুজো কিছুটা ম্লান। মোদী, শাহ, নাড্ডার মতো কোনও হেভিওয়েট নন, পুজোর সূচনা হল রাজ্য় বিজেপির নেতৃত্বের হাতে। পুজো উদ্বোধন করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন রাহুল সিনহা, অগ্নিমিত্রা পল-সহ রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। এই পুজো প্রথমবার উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তৃতীয় বছরে পা দেওয়া এই পুজোর জৌলুস এবার অনেকটাই কম। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়োগ দুর্নীতিকে পুজোর থিমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
গাজিয়াবাদের বৈশালি সেক্টর ৩ এ রচনা পার্কের অন্দরে ট্রিপল এস কে পিএস পুজো এ বার ১৭ বছরে পড়ল ।
শ্যামনগর গুড়দহ নতুন পল্লির পুজো এবার ৭৪ তম বছরে পা রাখল।এবার তাদের পুজোর ভাবনা রাজস্থানের বাহুবলী রাজ প্রাসাদ। মণ্ডপের গায়ে রাজপ্রাসাদের নানা চিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী। মায়ের রূপ এখানে সনাতনি। সকাল থেকেই শুরু হয়েছে পুজো। পুজোয় ব্যস্ত এলাকার বাসিন্দারা।
ছৌ নাচের মধ্য দিয়ে রামায়ণের রাবণ বধের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ধাদিকা যুব গোষ্ঠীর পরিচালনায় সর্বজনীন দুর্গোৎসবে । ধাদিকা যুব গোষ্ঠীর পরিচালনায় রাধিকা সর্বজনীন দুর্গোৎসব এবার ১৩ তম বর্ষে পদার্পণ করল । পুরুলিয়ার প্রায় হারিয়ে যাওয়া ছৌ নাচকে ফিরিয়ে আনতেই পূজা কমিটির এই উদ্যোগ বলেই জানিয়েছেন পূজো কমিটির অন্যতম সদস্য সুব্রত গুড়িয়া।
খানাকুল ফুটবল মাঠে যুবগোষ্ঠী ক্লাবের পুজো ৫২ তম বর্ষে পদার্পণ করল। হারিয়ে যাওয়া শৈশব মণ্ডপ শয্যায় উঠে এসেছে। “পুরানো সেই দিনের কথা” মূল থিম। এখনই দর্শনার্থীদের ঢল নামছে যুবগোষ্ঠী ক্লাবের পুজোতে। কৃষ্ণনগরের প্রতিমায় সেজে উঠেছে মন্ডপও।
রীতিমেনে হচ্ছে এবার বেলুড়ের পুজো। গত দু’বছরে কোভিড বিধি মেনে হয়েছে পুজো। রীতি মানা হলেও ভক্তদের সমাগমের ওপর ছিল নিষেধাজ্ঞা। বেলুড় মঠেও বিশেষ পুজো হচ্ছে। মহাষষ্ঠীতে দেবীর ঘট গঙ্গার জলে স্নান করিয়ে স্থাপন করে ষষ্ঠীর কল্পারম্ভ হয়। চলছে দেবীর বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাস অনুষ্ঠান। সকালে ও সন্ধ্যায় হবে স্বস্তির পূজা।
পুজোতেও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে চাকরিপ্রার্থীরা। বোধনের দিনে তাঁদের মুখও ম্লান। পুজোর চারটে দিনও ওঁদের কাটবে রাজপথেই।
বিস্তারিত পড়ুন: Protest for Recruitment: বোধনের দিনেও ‘অন্ধকার’! পুজোর দিনেও মুখে স্লোগান নিয়ে শুধুই দিন গোনা
পুজোতেও নিম্নচাপের ফাঁড়া। অসুর নিম্নচাপে পুজোর দিনগুলোতে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সপ্তমী থেকে রাজ্যে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা। এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
বিস্তারিত পড়ুন: Durga Puja Weather Update: ষষ্ঠী থেকে নবমী- কোন কোন জেলায় বৃষ্টি? পূর্বাভাস অনুযায়ী রইল তালিকা