কলকাতা: রাজ্যের ডিজির পর এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা অধিকর্তা বিবেক সহায়কে সরাল নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা অধিকর্তাকে অপসারণ করেছে কমিশন। জানানো হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জ ফ্রেম করা হবে।
গত বুধবার নন্দীগ্রামে তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার যে অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট তলব করেছিল নির্বাচন কমিশন। মমতা ‘জেড প্লাস’ ক্যাটিগরির নিরাপত্তা পান। প্রশ্ন ওঠে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই দেহরক্ষী এবং রাজ্য সরকারের এসএসইউ-এর (স্পেশাল সিকিউরিটি ইউনিট) সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও। ওই নিরাপত্তারক্ষীরা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তাঁকে চার-পাঁচ জন যুবক এসে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল বা সকলের সামনে গাড়ির দরজার ঘায়ে তাঁর পা জখম করল (প্রথমে এমনই অভিযোগ করেছিলেন মমতা), তা নিয়ে প্রত্যাশিতভাবেই কাটাছেঁড়া শুরু হয়।
অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসাররা এবং রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকদের মতে, যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় বড়সড় গাফিলতি দেখা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে অবিলম্বে যাঁরা তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই প্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবও ওই দিন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা বাহিনির সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী করেছিলেন। এর পর এদিন নির্বাচন কমিশন তাদের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক এবং রাজ্যের মুখ্যসচিবের দেওয়া রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বিবেক সহায়কে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিল।
কমিশনের পর্যবেক্ষণে আরও জানা গিয়েছে, গত বুধবার মমতার আহত হওয়ার পর এই ঘটনা যে পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ উঠেছিল তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবে জেড প্লাস সিকিউরিটি থাকার পরেও কেন এই দুর্ঘটনা হল তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। তারা জানায় ওইদিন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় গাফিলতি ছিল। যেহেতু এই দায়িত্ব ছিল রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা বিবেক সহায়, স্বাভাবিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
এদিন আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছে কমিশন। জানা গিয়েছে গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট বুলেট প্রুফ গাড়ি থাকা সত্ত্বেও সেখানে ছিলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই বুলেট প্রুফ গাড়িতে ছিলেন বিবেক সহায়। জেলা পুলিশের সঙ্গে রাজ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও সমন্বয় ছিল না। এ জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকেও দায়ী করেছে কমিশন। তিনি নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রোটকল মানেননি বলে দাবি করা হয়েছে। সফর সূচিও ক্রমাগত পরিবর্তন করছিলেন এবং এ নিয়ে রিটার্নিং অফিসারকে অবহিত করেননি বলে জানিয়েছে কমিশন।
এই প্রেক্ষিতে বিবেক সহায়কে অপসারণের পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করার কথা বলেছে কমিশন। বিবেক সহায়ের সঙ্গে অপসারিত হয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক ও এসপি-কেও।
আরও পড়ুন: টিকিট পেয়েও ভোটে লড়বেন না রন্তিদেব, অস্বস্তিতে বিজেপি
প্রসঙ্গত, এসএসইউ-এর ইউনিটের প্রধানের পদে ছিলেন আইপিএস অফিসার বিবেক সহায়। তাঁর আগে ওই পদে ছিলেন বিনীত গোয়েল। এবং তাঁরও আগে বীরেন্দ্র। ঘটনাচক্রে, যাঁকে গত মঙ্গলবার রাতে রাজ্য পুলিশের ডিজির পদ থেকে সরায় নির্বাচন কমিশন।