কলকাতা: “ভাইয়ো, বহেনোঁ, ম্যায় ছত্তিসগড় কে ধরতি সে আয়া হুঁ…” তার পরেই ব্রিগেডে মহাজোটের জনসভা থেকে মূলত বিজেপিকে আক্রমণ শুরু করেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল (Bhupesh Baghel)। রবিবার ব্রিগেডে কংগ্রেসের তারকা বক্তার কটাক্ষ, মোদী পরাক্রম দিবস পালন করেছেন। বাংলা সফরে এসে নেতাজির জন্মদিনও পালন করেছেন। কিন্তু আমি মোদীজিকে বলব, ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখুন। যে সময় নেতাজি আজাদহীন ফৌজ তৈরি করেছিলেন, তখন তোমাদের সভারকর, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ইংরেজদের ফৌজে সেনা ভর্তি করানোর কাজ করছিলেন। তোমরা কখনই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর উত্তরাধিকারী হতে পারে না। নেতাজির উত্তরাধিকারী এখানে যাঁরা উপস্থিত আছেন তাঁরা সকলে।” এটা বলেই ব্রিগেডের দিকে ইঙ্গিত করেন বাঘেল। বলেন, “আমরা সবাই নেতাজির উত্তরাধিকারী।” তারপর তিনি টেনে আনেন তাঁর রাজ্যের উন্নয়নের কথা।
নেতাজি ইস্যু থেকে পরিবহণ, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই কার্যত মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলা হল সেই মাটি যেখানে স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছে। এই সেই জায়গা যেখানে বড় বড় বিজ্ঞানী ও শিল্পীরা জন্ম নিয়েছেন। তাই আমি বাংলাকে দুই হাত জোড় করে প্রণাম জানাই। বলেন, আমি বাংলার জনগণের কাছে জানতে চাই, আপনারা সাম্প্রদায়িকতাকে শেষ করতে চান কি না? ভূপেশ বাঘেলের কটাক্ষ, দাড়ি বাড়িয়ে ঘুরে বেড়ালেই বাংলার জনতার মন পাওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, মোদী আগে বলেছিলেন দেশের কোনও কিছু বিক্রি হতে দেবে না। এখন রেল-বিমান সবই প্রায় বিক্রি হয়ে গিয়েছে। মোদী রাজ্যের গুজরাট মডেলকে কটাক্ষ করে তাঁর রাজ্যের ছত্তিসগড় মডেলের কথায় জোর দেন তিনি। এর আগে বিজেপি শাসিত অসমের নির্বাচনী প্রচারে গিয়েও একই খোঁচা দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, “উনি (পড়ুন নরেন্দ্র মোদী) গুজরাট মডেলের কথা বলেন। আমরা নেতাজির নামে পুলিশ অ্যাকাডেমি গড়েছি। উনি নিজের নামে স্টেডিয়াম করেছেন।” তিনি যোগ করেন, “দিদি-মোদী দু’জনেই বিভাজনের রাজনীতি করেন। এক জনের থেকে দেশ আর এক জনের থেকে বাংলাকে বাঁচাতে হবে।”
গত বিধানসভা নির্বাচনে ছত্তীসগঢ় বিজেপির হাতছাড়া হয়। ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। এরপরেই সে রাজ্যে কৃষকদের উন্নয়নে কৃষি ঋণ মকুব করেন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল। জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখার পাশাপাশি বাঘেল কংগ্রেস রাজনীতিতে উজ্জ্বল এক নাম। বাঘেল-এর আগে ছত্তীসগঢ়ের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন। পাঁচ বারের বিধায়ক তিনি। নব্বইয়ের দশকে অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশে দিগ্বিজয় সিংয়ের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। যুব কংগ্রেস থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করে বাঘেল বর্তমানে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সদস্য। ১৯৯৩ সালে পতন কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে প্রথম মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার সদস্য হন। মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ়ের গ্রামীণ এলাকায় বাঘেলের বক্তৃতার কদর খুব বেশি। সম্প্রতি তাঁকে অসমের নির্বাচনে জনসভা করতে দেখা গিয়েছে। এবার বাংলাতেও সভা করলেন তিনি।
এদিকে ব্রিগেডের জমায়েতে আপ্লুত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury)। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, “এত বড় সভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ জীবনে এই প্রথম।” তারপর শাসকদলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বললেন, “একুশে পরিবর্তন হবেই।” ভূপেশ বাঘেল যখন মূলত বিজেপিকেই আক্রমণ শানিয়েছেন তখন অধীরের লক্ষ্য মোদী ও মমতা। এদিন অধীরের হাতিয়ার ছিল সমসাময়িক ইস্যু। পেট্রোলের দাম নিয়ে তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বাংলার নেত্রী যদি চাইতেন তেলের রাজস্ব আরও কমাতে পারতেন। তিনি কমিয়েছেন ১ টাকা। চাইলে এই তেল অনেক কম দামে দেওয়া যেত।”
আরও পড়ুন: ‘দিদির বিদায় সময়ের অপেক্ষা’, কালীঘাটে পুজো দিয়ে তোপ শিবরাজের
কেন্দ্রকে উদাসীন প্রমাণে মরিয়া অধীরের টিপ্পনি, “মোদী ও কোহলি দু’জনই সেঞ্চুরি করতে চলেছেন।” তাঁর বার্তা, “এই জোট ধর্মভিত্তিক নয়। তাঁরা চান এই বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। বলেন, “নতুন পরিবর্তনের রামধনু লক্ষ্য করছি। লড়াই হবে।” অধীরের কথায়, “মমতার ভাষায় মমতাকে জবাব দিতে চাই, মমতা দেখে যান সংযুক্ত মোর্চার ক্ষমতা।”