কলকাতা: ‘সুপ্রিম কোর্ট যুগ যুগ জিও’। শুক্রবার বেলা তখন প্রায় ১টা। খবরের শিরোনামে একজনই, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। দেশের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ একটি মামলা তাঁর এজলাস থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে। তবে তখনও ধোঁয়াশা, কোন মামলা। যেহেতু নিয়োগ-মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে চলছে, তাই এ সংক্রান্তই যে নির্দেশ তেমনটা বোঝাই গিয়েছে। বেলা আরও গড়াল, জানা গেল কুন্তল ঘোষের একটি মামলা, যেখানে বলা হয়েছে কুন্তলকে চাপ দিয়ে অভিষেকের নাম বলানোর চেষ্টা চলছে, সেই মামলা সরল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে। তবে সুপ্রিম-অর্ডার ওয়েবসাইটে আপলোড না হওয়া পর্যন্ত কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেননি, এই নির্দেশের বিস্তারিত।
শুক্রবার দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে যেসব মামলার শুনানি ছিল, তার মধ্যে দু’টি মামলা আপাতত শুনবেন না বলেন তিনি। একটি প্রাথমিক টেট সংক্রান্ত মামলা, অন্যটি রমেশ মালিকের দায়ের করা মামলা। বিকেল তখন প্রায় ৪টে। জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলের কাছ থেকে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারের ট্রান্সক্রিপশন (অনুবাদ) এবং রেজিস্ট্রার জেনারেলের হলফনামার কপি চেয়ে পাঠিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। নির্দেশ দিয়েছেন, রাত ১২টার মধ্যে যেন সেই কপি হাতে আসে তাঁর। তিনি রাত সওয়া ১২টা অবধি নিজের চেম্বারে থাকবেন বলেও শোনা যায়।G
শুক্রবার ক্রমেই হয়ে উঠছিল ‘হাইভোল্টেজ’। সন্ধ্যা গড়াতেই আবার খবর, সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি এএস বোপান্না এবং বিচারপতি হিমা কোহলির স্পেশাল বেঞ্চ বসছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের বিষয়টি বিবেচনায়। স্পেশাল বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, যেভাবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, তা সঠিক নয়। এরপরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নথি চাওয়ার যে নির্দেশ, তাতে স্থগিতাদেশ দেয় স্পেশাল বেঞ্চ। অর্থাৎ রাত ১২টা অবধি আর আদালতের চেম্বারে অপেক্ষা করতে হয়নি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে।
আদালত থেকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বেরিয়ে পড়েন বাড়ির পথে। হাইকোর্টের সামনে তখন সাংবাদিকদের ভিড়। দাঁড়িয়ে কথা বলেন বিচারপতি। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরও দেন। বলেন, তিনি নিজে কোনও মামলা সরাচ্ছেন না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে সবটা হচ্ছে।
বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার আমাদের সকলকে মেনে নিতে হবে। একটা ডিসিপ্লিন তো আছে। সুপ্রিম কোর্ট এই দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আমরা হাইকোর্ট হিসাবে সেই সুপ্রিম কোর্টকে মেনে চলি। সুপ্রিম কোর্ট অর্ডার দিয়েছে সেটাকে মেনে চলতে হবে। এতে যার যত মন খারাপই হোক, ব্যক্তিগতভাবে যদি কারও হয়ে থাকে, এখানে বিশেষ কিছু করার নেই।” এ কথার রেশ ধরেই এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যুগ যুগ জিও। আর কী বলব’। গোটা ঘটনা যাকে কেন্দ্র করে, সেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এই ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় সহজেই ধরা দিচ্ছে তার মনের অবস্থা।
তবে এরপরও কোনও মামলা তাঁর এজলাসে এলে একইভাবে সরব থাকবেন তিনি, সে কথার উল্লেখ করে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমি যে কোনও দুর্নীতির বিরুদ্ধেই সরব হব। এই যে মামলা সেটা আমি তো কোনও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে শুরু করিনি। সুতরাং আমার কাছে রইল, কী অন্য কারও কাছে গেল, তা নিয়ে আমার বিশেষ কোনও মাথা ব্যথা নেই। আরও দুর্নীতির মামলা আছে। আমার ধারণা আমার হাত থেকে সেগুলিও সরে যাবে একই গ্রাউন্ডে।” তবে তিনি পদত্যাগ করছেন না, তিনি পালিয়ে যাওয়ার লোকও নন, এদিন শুনিয়েছেন সে কথাও।