কলকাতা: আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়কের দল বদল ঘিরে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে। রবিবার কলকাতায় ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে এসেছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল (Suman Kanjilal)। তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেকের হাত থেকে উত্তরীয় পরেন গলায়। তবে তাঁর হাতে জোড়া ফুলের পতাকা দেখা যায়নি। আর এই পতাকা না দেখা যাওয়াকেই ‘হাতিয়ার’ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রশ্ন তুলেছেন, দলত্যাগ বিরোধী আইন থেকে বাঁচতেই কি প্রতীক ছাড়া ফুল বদল সুমনের? এর আগে মুকুল রায়ের তৃণমূলে যোগের সময়ও একই প্রশ্ন উঠেছিল। তাঁর হাতেও দেখা যায়নি তৃণমূলের পতাকা। যতবার বিধানসভায় বিরোধীরা মুকুলের ‘দলত্যাগ’ নিয়ে সোচ্চার হয়েছে, ততবারই বিধানসভার অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, মুকুল রায়ের দলত্যাগের সপক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই। একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বাইরে কে কী করেছেন সেটা তাঁর বিচার্য বিষয় নয়, বিধানসভার অভ্যন্তরে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক হিসাবেই রয়েছেন মুকুল রায়। অন্যদিকে আবার প্রশ্ন রয়েছে শিশির অধিকারী, দিব্যেন্দু অধিকারীদের সাংসদপদ নিয়েও। তৃণমূলই এ প্রশ্ন তুলেছে বারবার। তৃণমূলের বক্তব্য, শিশির-দিব্যেন্দু তৃণমূলের প্রতীকে জেতা সাংসদ। আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল ছেড়েছেন এমনও নয়। অথচ অমিত শাহের মঞ্চে সেই শিশির অধিকারীর উপস্থিতি দেখা গিয়েছে।
রবিবার সুমন কাঞ্জিলাল তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারী টুইট করেন, ‘দলত্যাগ বিরোধী আইনের ভয়েই কি তৃণমূলের পতাকা হাতে দিলেন না? মুকুল রায়কে বিধানসভার ভিতরেও দাবি করা হয়েছে তিনি বিজেপির। সুমন কাঞ্জিলালের ক্ষেত্রেও হয়ত সেরকমই হবে। চ্যালেঞ্জ করছি, হিম্মত থাকলে সুমনকে বিধানসভায় বলতে বলুন তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।’ বিজেপির আরেক বিধায়ক মিহির গোস্বামীর বক্তব্য, “হয়ত কোনও ভয়ে বা লোভে তৃণমূলে যেতে পারে। মনে কোনও ক্ষোভ থাকলে তো দলে কোনও জানাননি। ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া দলবদলের কোনও কারণ নেই।”
যদিও তৃণমূল আবার এই ‘পতাকা রাজনীতি’কে আমল দিতেই নারাজ। শুভেন্দুর টুইটের পাল্টা কুণাল ঘোষকে বলতে শোনা গিয়েছে, “শুভেন্দু দলত্যাগবিরোধী এত তত্ত্ব বলার আগে, সাধারণ মানুষের জন্য টুইট না করে, প্রথমে তুমি বাড়ি যাও। বাড়ি গিয়ে দরজা বন্ধ করে নিজের বাবা আর ভাইকে অ্যান্টি ডিফেকশন সংক্রান্ত নীতি বোঝাও।” তৃণমূলের মন্ত্রী শশী পাঁজার বক্তব্য, “সুমন কাঞ্জিলাল একজন স্বাধীন ব্যক্তি। তাঁর রাজনৈতিক ভাবনাচিন্তার সঙ্গে নিশ্চয়ই মিলছিল না। তাই এখানে এসেছেন, আমাদের আদর্শের সঙ্গে যোগদান করেছেন। এর মধ্যে ওই রেখে ঢেকে কথা, কেন পতাকা ছিল না, এগুলো খুবই ক্লিশে। মূল কথা হল আপনার নির্বাচিত সাতজন বিধায়ক এবং একজন সাংসদ যে চলে এলেন, ঘর কীভাবে সামলাচ্ছেন?”
এক সময় বিজেপিতে ছিলেন, এখন তিনি তৃণমূলে, সেই জয়প্রকাশ মজুমদারেরও বক্তব্য, “ঝান্ডা থাকলে একরকম, পতাকা থাকলে একরকম, গলায় উত্তরীয় থাকলে একরকম এটা কি খুব বড় কথা? যে মানসিকতা বা যে ইচ্ছা তার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে কি না সেটাই কথা।”