সায়ন্ত ভট্টাচার্য : চালু হয়েছে ওয়েভার স্কিম( Waiver Scheme)। কিন্তু,নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কর তো জমা পড়েইনি। উপরন্তু, কর বকেয়া রাখা নাগরিকরাও ‘কুলুপ এঁটেছেন’।সঙ্গতকারণেই আবেদন করার সেই সময়সীমা এক মাস বাড়িয়ে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। এই আবেদনে যাতে মানুষ আরও বেশি করে সাড়া দেয়, তার জন্য মাইকে প্রচার, টিভি-রেডিওতে বিজ্ঞাপন, লিফলেট বিলির পাশাপাশি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটকেও হাতিয়ার করছে পুরসভা।
ফেসবুকে ওয়েভার স্কিম(Waiver Scheme) সম্পর্কে প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুর প্রশাসন। পাশাপাশি কর বকেয়া রাখা সম্পত্তির মালিকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমীক্ষা শুরু করল পুরসভার কর মূল্যায়ণ বিভাগের আধিকারিক-কর্মীরা। পুরসভা সূত্রের খবর, তিন ভাগে বিভক্ত এই সমীক্ষা। কে বকেয়া কর একেবারেই অনাগ্রহী, কার পক্ষে দেওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য, এবং কোন কোন সম্পত্তির কর মূল্যায়ণ নিয়ে জটিলতা রয়েছে, এই তিনটি বিষয় সমীক্ষার প্রতিপাদ্য।
আরও পড়ুন : কেন লুকিয়েছিলেন বৈবাহিক সম্পর্ক? এবার প্রিয়াঙ্কা-জুনিয়ারের বাবা-মাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা
পুরসভার রাজস্ব বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা জানান, বাড়ি বাড়ি প্রচারের সময় যে সম্পত্তিগুলির কর মূল্যায়ণ নিয়ে জটিলতা রয়েছে, সেই মালিকদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে যাবতীয় নথি নিয়ে আলোচনায় বসবেন পুরআধিকারিকরা। জটিলতা কাটাতে, নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। ওই কর্তা এও বললেন, ‘আমাদের লক্ষ্য বকেয়া করের অন্তত ৬০-৭০ শতাংশ নিজেদের কোষাগারে নিয়ে আসা। এতে, বর্তমান আর্থিক সঙ্কটে থাকা পুরসভার কিছুটা অক্সিজেন প্রাপ্তি হয়।’
আরও পড়ুন : ‘ধর্মের চেয়ে বড় জীবনের অধিকার’, গঙ্গাসাগর মেলায় ‘ফুল স্টপ’ দিতে পারে হাইকোর্ট
কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘ওয়েভার স্কিম দিনের পর দিন চলতে পারে না। কিন্তু যাঁদের অবস্থা স্বচ্ছল থাকা সত্ত্বেও কর দিচ্ছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে পুরসভাকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।’ ওয়েভার স্কিমে আবেদনের জন্য যে বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে, তা শেষ হলেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
প্রসঙ্গত, বিপুল পরিমাণ বকেয়া সম্পত্তি কর আদায়ে ওয়েভার স্কিম চালু করেছিল কলকাতা পুরসভা। লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল অন্তত ৭৫০ কোটি টাকা। অথচ, নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত জমা পড়েছে মাত্র ১১৯ কোটি টাকা। স্বাভাবিকভাবেই বিপুল বকেয়ার এই সামান্য আদায়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পুর প্রশাসনের কর্তাদের মাথায়। ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ কলকাতা পুরসভার অর্থভাণ্ডারে এই সামান্য টাকা আদায়ের জেরে কোনও কাজই করা সম্ভবপর হবে না বলে মনে করছেন তাঁরা। যেকারণেই ওয়েভার স্কিমে আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়।
আরও পড়ুন : এজেন্সিই সব করে! ফাইলে ‘নোট’ দিতে লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন সরকারি চাকুরীজীবীদের
রাজস্ব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তার দাবি, সাধ্য থাকলেও কর না দিলে পুর আইন মোতাবেক কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে পুর প্রশাসন। প্রথমে নোটিস দিয়ে সতর্ক করা। তারপর মুভেবল প্রপার্টি অর্থাৎ দু’-চাকার গাড়ি হোক বা চার চাকার, সেগুলি বাজেয়াপ্ত করে বকেয়া অর্থ আদায় করা হবে। তাতেও যদি বাকি থাকে, তাহলে স্থায়ী সম্পত্তি অর্থাৎ ঘর-বাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হবে। সেকারণেই সমীক্ষাটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে করা প্রয়োজন।
শহরে ১৬টি বরোতে কতগুলি বাড়ি বেআইনি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, কতগুলি সঠিক সম্পত্তি কর দেয়, এই ধরনের নানা তথ্য ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করেছে রাজস্ব বিভাগ। পুরসভার নিজস্ব তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে শহরে প্রায় সাড় সাত লক্ষ থেকে আট লক্ষ করদাতা রয়েছেন। কিন্তু সংযুক্ত এলাকা এবং বন্দর এলাকার একাধিক বাড়ি বা জমির কর মূল্যায়নই আজ পর্যন্ত হয়নি। এমনকী অনেক বাড়ি বা বহুতলের মিউটেশন বা অ্যাসেসমেন্ট না হওয়া সত্ত্বেও দিনের পর দিন সেখানে বাসিন্দারা বসবাস করছেন। এমন অনেক বহুতল বা বাড়ি রয়েছে, যার একটি অংশ বাণিজ্যিক কাজে ভাড়া দেওয়া হয়েছে, অথবা ব্যবহার করা হচ্ছে পুরসভাকে অন্ধকারে রেখেই।
আরও পড়ুন : ‘যুবশ্রী’দের নবান্ন অভিযান, এক মঞ্চে কণিষ্ক পণ্ডা-রোহন মিত্র
নিজস্ব পরিকাঠামোর অভাবে সেই সম্পত্তিগুলির কর নির্ধারণও করতে পারেনি পুর প্রশাসন। পুরসভার এক শীর্ষ আমলার কথায়, দিনের পর দিন অনেক নাগরিকই কর জমা না দিয়ে আটকে রাখে। মামলার জটিলতায় সেগুলি আদায় করাও যায় না। তা আদায়ের জন্য যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা আজও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। সেই কারণেই বকেয়া সম্পত্তি করে সুদ ও জরিমানা ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পুর কর্তাদের কথায়, গত ১ অক্টোবর থেকে চালু হওয়া ওয়েভার স্কিমের মাধ্যমে আশা করা হয়েছিল, করদাতারা আগের তুলনায় অনেক বেশি সাড়া দেবেন। সেকারণেই সুদ এবং জরিমানায় ১০০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। গতবারের তুলনায় এবার অনেক বেশি নমনীয় হয়েছিলেন পুরপ্রশাসক। কিন্তু তাতেও তেমন সুবিধা হয়নি।