কলকাতা: গত ১৭ নভেম্বর নতুন স্থায়ী রাজ্যপাল (Governor CV Ananda Bose) পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তার আগে সাময়িককালের জন্য দায়িত্ব পেয়েছিলেন মণিপুরের রাজ্যপাল লা গণেশন। মূলত বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের ইস্তফার পর সিভি আনন্দ বোসই বাংলার স্থায়ী রাজ্যপাল। সেই রাজ্যপাল যিনি বাংলা ভাষা শিখতে এতটাই আগ্রহী, সরস্বতী পুজোর বিকেলে রাজভবনে স্লেট, পেনসিল নিয়ে হাতেখড়িও সারলেন। আমবাঙালির চোখে এই হাতেখড়ি নিছক ভাষার হাতেখড়ি হলেও, রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, এই হাতেখড়ি আসলে রাজ্য-রাজ্যপালের হাতেখড়ি। বিশেষ করে প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে বর্তমান রাজ্য সরকারের সম্পর্কের যে সমীকরণ ছিল, সেই জায়গা থেকে বর্তমান রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের যে সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
নতুন রাজ্যপাল হিসাবে সিভি আনন্দ বোস এ রাজ্যে আসার পর তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে এ রাজ্যের শাসকদল। তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন সময় রাজ্যের প্রশংসাও করেছেন রাজ্যপাল বোস।
জগদীপ ধনখড় যখন এ রাজ্যের রাজ্যপাল ছিলেন, ঠিক এর উল্টো ছবিটা দেখা যেত সবসময়। কোনও ক্ষেত্রেই মত মিলত না নবান্ন ও রাজভবনের। বরং এ রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপির সে সময় অনেক বেশি রাজভবনের যাতায়াত বেড়ে গিয়েছিল। রাজনীতির কারবারিরাই বলতেন, বঙ্গ বিজেপির কাছে অভিযোগ অনুযোগ শোনার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হয়ে গিয়েছিল রাজভবন। কিন্তু বোসের রাজ্যপাল হওয়া ইস্তক সে রকম ঘনঘন যাতায়াত দেখা যায়নি বিজেপি বিধায়কদের।
এ দিন বিরোধী দলনেতা বৃহস্পতিবার রাজভবনে রাজ্যপাল বোসের হাতেখড়ি কার্যত ‘বয়কট’ই করেন। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যপালের যে হাতেখড়ি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, তা রাজ্যপালের চেয়ার এবং রাজভবনের পদমর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। একইসঙ্গে তিনি মনে করান, অতীতে এই সরকারই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরানোর জন্য বিধানসভায় ঝড় তুলেছে।
যদিও এদিন রাজ্যপালের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শাসকদলের একাধিক নেতাকে দেখা গিয়েছে। ছিলেন রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালের বাংলা শেখার ইচ্ছার প্রশংসাও করেন। রাজ্যপালের হাতে বর্ণপরিচয় তুলে দেন তিনি। বলেন, সরস্বতী পুজোর শুভ মুহূর্তে উনি বাংলা শিখলেন আমরা গর্বিত। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। তাঁর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।
অন্যদিকে শুভেন্দুর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করে কুণাল ঘোষ দাবি করেন, “এই ধরনের বক্তব্যে রাজ্যপালকে অপমান করা হয়েছে, রাজ্য সরকারকে ছোট করা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীকে কুৎসার কেন্দ্রে আনা হয়েছে।” সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু-সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বৈঠকের শেষে খোদ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁদের সংঘাত অতীত। নতুন সম্পর্ক তৈরি হতে চলেছে রাজভবন ও নবান্নের মধ্যে।
একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন ব্রাত্য বসু। সে দিনই আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্য ও রাজ্যপালের অতীত তিক্ততার অবসান ঘটে বলে রাজনৈতিক মহলের মত। তারপরেই এই হাতেখড়ি পর্ব। কার্যত বিরোধী শূন্য ‘হাতেখড়ি’ অনুষ্ঠানে শোভা পেয়েছেন শাসকদলের বিধায়ক-সাংসদরা। মূল আকর্ষণ ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক কারিবারিরা মনে করছেন, রাজ্যপাল বোসের এদিনের হাতেখড়ি আসলে বাংলা ভাষার হাতেখড়ি নয়, রাজ্য-রাজ্যপালের সম্পর্কের হাতেখড়ি।