কলকাতা: রাজ্য রাজনীতির অলিন্দে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে একটাই প্রশ্ন, পঞ্চায়েত ভোট (Panchayet Election) কবে হবে? সূত্রের খবর, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের (State Election Commission) প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনের সঙ্গে এখনও কোনও আলাপ আলোচনা করেনি রাজ্য। প্রশাসনিক মহলের একাংশ বলছে, ভোট নিয়ে এমন নীরবতা এর আগেও কখনও দেখা যায়নি। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও দিনক্ষণ নিয়ে একাধিকবার আলাপ আলোচনা হয়েছিল কমিশন ও রাজ্য সরকারের মধ্যে। তবে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত কবে হবে? তা নিয়ে নানা চর্চা, তরজা রয়েছে বঙ্গ রাজনীতির নানা প্রান্তে।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েতগুলির প্রথম বোর্ড মিটিং অনুযায়ী, এবার ১৫ অগস্টের মধ্যে ভোট করাতে হবে। তবে, ভোট পিছনোর সুযোগও রয়েছে রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার আইনে। সময় পার করলে তিন মাস পর্যন্ত প্রশাসক বসিয়ে পঞ্চায়েত চালানো যায়। ফলে অগস্ট অবধি মেয়াদ থাকলে, এরপর আরও তিনমাস প্রশাসক বসিয়ে চালালে নভেম্বর পর্যন্ত টানা যেতে পারে আনায়াসে। নভেম্বর অর্থাৎ পুজোর পর সেই ভোট করানোর সুযোগ থাকছে রাজ্যের কাছে।
দিন কয়েক আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ২ মে পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে পারে। এদিকে সেই শুভেন্দুকেই বৃস্পতিবার বলতে শোনা গিয়েছে, জুলাই মাসে ভোট হতে পারে। তবে এ নিয়ে তিনি পুরোপুরি সংশয়মুক্তও নন। রাজনীতির কারবারিদের অনেকের মতে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসংযোগ যাত্রা ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে দু’মাস চলবে। ফলে ২৫ জুন পর্যন্ত ভোটের সম্ভাবনা নেই বললে ভুল হবে না। সেই জায়গা থেকে জুলাইয়ের কথা অনেকে ভাবছেন। যদিও বৃহস্পতিবারই অভিষেক স্পষ্ট করেছেন, ভোট ঘোষণা হয়ে গেলে নিয়ম মেনে তাঁর কর্মসূচিতেও বদল আসবে।
তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপরেই ভোট নির্ভর করছে বলে মত রাজনীতির কারবারিদের অনেকের। তাঁদের মতে, ভোটের পরিস্থিতি অনুকূল বুঝলে পঞ্চায়েত ভোট নির্দিষ্ট সময়ে হয়ে যেত। সেই পরিস্থিতি অনুকূল না প্রতিকূল হয়তো তা নিয়ে দোটানায় রয়েছে রাজ্য সরকার। সে কারণেই ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে ভোট। যদিও সম্প্রতি নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভোটের দিনক্ষণ পুরোপুরি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে রয়েছে। তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই চূড়ান্ত।
রাজনীতির বিভিন্ন স্তরে জোর আলোচনা, নানা দুর্নীতির অভিযোগে শাসকদল যেমন বিদ্ধ তেমনই গোষ্ঠী লড়াই নিয়েও চিন্তা রয়েছে। তাই এহেন পরিস্থিতিতে আরেকটু সময় নিয়ে এগোতে চাইছে তৃণমূল। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে অভিষেকের জনসংযোগ কর্মসূচি। যদিও এই যুক্তি আবার শাসকদল মোটেই মানতে রাজি হয়।
প্রশাসনের অন্দরে যাঁরা এ নিয়ে খোঁজ খবর রাখেন, তাঁরা বলছেন ফেব্রুয়ারি মাসে ভোট হবে এটা অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। পরবর্তীতে স্থির হয় মে মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে হবে ভোট। তারপরে কার্যত একবারে নীরব রয়েছে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট মহল। চলতি সপ্তাহে মঙ্গলবার জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক ছিল কমিশনের। কিন্তু সে বৈঠক বাতিল হয়। সূত্রের খবর, ভোট নিয়ে আপাতত কোনও সাড়া শব্দ না থাকার কারণেই তা বাতিল করা হয়।
তবে রাজনীতির টানাপোড়েনে ভোট যত পিছোবে, ততই দুর্ভোগের আশঙ্কা বাড়বে সাধার মানুষের। পঞ্চায়েত ভোট মূলত প্রান্তিক গ্রামীণ জনতার পরিষেবার কথা মাথায় রেখে। জল,রাস্তা, আলো যা কিছু দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকে, সেই পরিষেবা সুনিশ্চিত করতে পঞ্চায়েতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এই ভোটে যত বিলম্ব হবে, ততই জটিলতা বাড়বে। প্রশাসক বসালেও তিনি কি একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির ভূমিকা নিতে পারেন, সে প্রশ্নও থেকেই যাচ্ছে।