কলকাতা: প্রায় আড়াই বছর পর পুজোর মুখে খুলে দেওয়া হল টালা ব্রিজ। বৃহস্পতিবার নতুন রূপে টালা ব্রিজের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে এদিন সকালেই ব্রিজের উদ্বোধনের প্রাক্কালে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসীর একাংশ। পুনর্বাসনের দাবি বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। এদিন ব্রিজের উদ্বোধনের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এলাকাবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ব্রিজের কাজ চলায় সমস্যা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি রেল কর্তাদের কাছে অনুরোধ করছি, এখানে রেলাইনের পাশে ফাঁকা জমি রয়েছে। সেই জমি রাজ্য কিনে নিতে চায়। এখানে ১৪৫টি পরিবার রয়েছে। আমি সেখানে ওই পরিবারদের পুনর্বাসন দিতে চাই। ফিরহাদ হাকিমকে বলছি, টাকার যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখতে হবে। নইলে আমাকে খালের ধারে ব্যবস্থা করতে হবে। আমি রেলকে বলছি, ওই জমিটা আমাকে দিক। আমি কিনে নেব। বিনামূল্যে নেব না।”
এবার থেকে টালা ব্রিজ ‘হেমন্ত সেতু’
বিটি রোডের উপর টালা রেল স্টেশন সংলগ্ন ৭৪৩ মিটার দীর্ঘ ফোর লেন ‘হেমন্ত সেতু’। চিৎপুরের দিকে র্যাম্পটির দৈর্ঘ্য ৩০০ মিটার। আগের ব্রিজের তুলনায় অনেক চওড়া। আগের সেতুটি দুই লেনের ছিল, এবার তা চার লেনের। ভারবহন ক্ষমতাও অনেক বেশি। তবে এখনই এই সেতু ধরে ভারী গাড়ি চলাচল করবে না বলেই জানান তিনি। মমতা বলেন, “পুজোর আগে এটা আপনাদের কাছে বড় উপহার। মাঝেরহাট ব্রিজ ভাঙার পর দেখেছি কীভাবে মানুষকে ঘুরে ঘুরে যেতে হতো মানুষকে। চার থেকে পাঁচ বছর কষ্ট সহ্য করেছে। টালা ব্রিজ যখন ভাঙার কাজ শুরু হয়, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন চার মাস ভাঙতেই সময় লাগে। রেল ভাঙতে সময় নেয়।” আড়াই বছরের মধ্যে নতুন রূপে খুলে গেল তা।
রেল ভেবেছিলাম ছাড় দেবে : মমতা
এই ব্রিজ নিয়ে রেলকে অর্থ দিতে হয়েছে বলেও এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এই ব্রিজ তৈরিতে রাজ্য সরকারের ৫০৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। পুরো টাকাটাই সরকার দিয়েছে। আমাদের রেলকেও টাকা দিতে হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম রেল হয়ত সোশ্যাল ওয়ার্ক হিসাবে এটা কনসেশন করে দেবে। ব্রিজটা ভাঙতে যে টাকা লেগেছে, সে টাকা আমাদের আলাদা দিতে হয়েছে। এই ব্রিজের জন্য রেল আমাদের কাছ থেকে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। মাঝেরহাট জয়হিন্দ সেতুর জন্যও রেলকে প্রায় আমাদের ৩৪ কোটি টাকা দিতে হয়েছে।”
টাকা হলে আরও উড়ালপুল হবে
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, আরও একাধিক উড়ালপুলের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর সরকারের। তবে অর্থ এলে তা বাস্তবায়িত হবে। তালিকায় রয়েছে, টালা থেকে ডানলপ উড়ালপুল, পাইকপাড়া থেকে শিয়ালদহ উড়ালপুল, এয়ারপোর্ট গেট থেকে যশোর রোড ও ভিআইপি রোডের সংযুক্তিকরণের জন্য উড়ালপুল। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আরও চারটে বিমানবন্দর হচ্ছে। মমতা বলেন, “কোচবিহার ইতিমধ্যেই করে দিয়েছি। আরেকটু বাড়াতে হবে। বালুরঘাট হচ্ছে, মালদহ হচ্ছে, অণ্ডাল আমরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চাই। এছাড়া পুরুলিয়ার ছড়ড়াতেও আমাদের একটা করার পরিকল্পনা আছে। আমরা ২৬টা হেলিকপ্টার সার্ভিস করেছি।”
ফুটপাথ দখল নিয়ে কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
এদিন মুখ্যমন্ত্রী যত্রতত্র রাস্তা দখল করে বসে পড়া নিয়েও কড়া বার্তা দেন। স্পষ্ট বলেন, “দেখতে পাচ্ছি, বাইরে থেকে ১০ জন এলাকায় এসে বসে পড়ছে। প্রশাসন অনেক সময় জেনে ব্যবস্থা নেয় না। পাড়ার নেতারাও জানে, ব্যবস্থা নেয় না। সবাই হাঁটাচলা করি, কিন্তু কিছু করি না। পুরো ফুটপাথটাই যদি দখল হয়ে যায়, তা হলে আমি হাঁটব কী করে? আমি হকারদের পক্ষে। হকারদের উচ্ছেদ করতে দিই না। এই জন্যই আমি বলেছিলাম হকারদের একটা কার্ড দেওয়ার জন্য। তাতে তাঁদের স্থায়িত্ব থাকে। এটা দেখতে হবে। অনেকদিন হয়ে গেছে।”