কলকাতা: নতুন শিক্ষা নীতি বাস্তবায়নের পথে রাজ্য। তাতে উচ্চ মাধ্যমিকে MCQ, অষ্টম শ্রেণি থেকে সেমেস্টার-সহ পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে একাধিক পুনর্মূল্যায়নের কথা রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি। রাজ্যের নতুন শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের বদলি সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক অনুপাত ঠিক করতে শিক্ষকদের ৫ বছরের জন্য গ্রামীণ এলাকায় পোস্টিংয়ের বিষয়টি নতুন শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে।
ছাত্র শিক্ষক অনুপাত ঠিক করতে শিক্ষকদের গ্রামীণ এলাকায় পোস্টিংয়ের প্রস্তাব রয়েছে। মূলত বারবার অভিযোগ উঠেছে, গ্রামের স্কুলগুলিতে শিক্ষক নেই। যেখানে এক অনুপাতে ৫০ কিংবা ৬০ হওয়া উচিত, সেখানে একশো জন ছাত্র রয়েছে, শিক্ষক নেই। কারণ এই পছন্দ মতো বদলি। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এই অভিযোগও সামনে এসেছে গ্রামীণ এলাকায় পোস্টিং হলেও, পরবর্তী ক্ষেত্রে আবেদনের ভিত্তিতে নিজেদের পছন্দের এলাকায় বদলি নিয়েছেন শিক্ষকরা। গ্রামের স্কুলগুলি শিক্ষকহীনতায় ভুগেছে।
নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক মামলায় তদন্তের মাঝেও উঠে এসেছিল শিক্ষকদের পছন্দমতো বদলি সংক্রান্ত একটি মামলা। অভিযোগকারীর বক্তব্য ছিল, অনেকেই টাকার বিনিময়ে কিংবা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাঁর বাসস্থানের আশপাশে বদলি নিচ্ছেন। এরফলে গ্রামের স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাব দেখা দিচ্ছে। স্কুলে পড়ুয়া থাকলেও অনেকক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, এক জন কিংবা দু’জন শিক্ষকই ক্লাস করাচ্ছেন। মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে এমনও খবর হয়েছে, যে স্কুলে শিক্ষকই নেই, বাধ্য হয়ে অশিক্ষক কর্মীদের দিয়ে পড়ুয়াদের পড়ানো হচ্ছে। ফলে গ্রামের স্কুলগুলোকে স্কুলছুটের সংখ্যাও বাড়ছে। শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত বিঘ্নিত হয়েছে।
তাই নতুন শিক্ষা নীতি নির্ধারিত হচ্ছে, একজন শিক্ষককে তাঁর চাকরিজীবনের পাঁচ বছর গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করতে হবে। এই সুপারিশ করেছে মন্ত্রিসভা। অন্যদিকে, জাতীয় শিক্ষানীতি বলছে, এমন পোস্টিং নীতি ঠিক করতে হবে, যাতে আগামী দুই দশকে জানা যায় কোন বিষয়ে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে।
গ্রামের স্কুলগুলিতে শিক্ষক ঘাটতি নিয়ে শিক্ষাবিদ নন্দিনী মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য সরকারের উৎসশ্রী নামক একটা ভুল পরিকল্পনার জন্যই গ্রামে শিক্ষক নেই। সবাই শহরে চলে এসেছেন। আবার বলছে, ৫ বছরের জন্য গ্রামে পাঠাবে। সঠিক পরিকল্পনা করে না করতে পারলে আবার সমস্যাই হবে।”
রাজ্য সরকারের সমালোচনা করলেন শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকারও। তিনি বলেন, “এই সঙ্কট তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের নীতি দায়ী। গ্রামে পোস্টিংয়ের প্রস্তাব নীতিগত ভাবে মানা যেতে পারে। তবে তাদের ফিরিয়ে আনারও সঠিক রূপরেখা প্রয়োজন। নাহলে দেখব স্বজনপোষণ হচ্ছে।”