কলকাতা: বসিরহাট, ভাঙর মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময়ে বাধার মুখে পড়ার অভিযোগ তুলে মামলা। মঙ্গলবার সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ভর্ৎসনার মুখে পড়ে পুলিশ। বিচারপতির গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ, হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও নিরাপত্তা দিয়ে আবেদনকারীদের মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ পুলিশ। এদিনের সওয়াল জবাবের শুরুতেই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, মনোনয়ন পর্বে এত জায়গায় জায়গায় গোলমাল, বোমাবাজি, গোলাগুলির অভিযোগ উঠেছে। তাহলে পুলিশ কী করছিল? ১৫ ও ১৬ জুন বিরোধী প্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশি নিরাপত্তায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, হাইকোর্টের নির্দেশ পালনে পুলিশ কী করেছে? বসিরহাট ও ভাঙড়ের অশান্তির পর কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে?
এদিনের সওয়াল জবাবের সময়ে বিচারপতি মান্থা জানতে চান, এলাকায় নিরাপত্তার জন্য ক্যানিং, মিনাখাঁ , ভাঙর, ন্যাজাট, জীবনতলা এলাকায় মনোনয়নের জন্য কী পরিমাণ পুলিশ কোথায় দেওয়া হয়? নির্দেশের পরেও কেন প্রার্থীরা মনোনয়ন দিতে পারলেন না, তা পুলিশকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
শুনানির সময়ে রাজ্যের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়াল করেন, কোনও আবেদনকারী মনোনয়ন জমা দেননি। আবেদনে কোথায় নির্দিষ্ট করে কেউ অভিযোগ করছেন না, তিনি হেনস্থার শিকার হয়েছেন। তিনি আদালতে উল্লেখ করেন, ১৩ জুন ৯৩ জন মনোনয়ন জমা দেয় ভঙড়ে। ১৪ জুন সেখানে তৃণমূল ও আইএসএফের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। যারা মামলা করছেন, তাঁরা আগে প্রমাণ দিন।
রাজ্যের তরফে সওয়াল করা হয়, এটি একটি রাজনৈতিক সংঘর্ষ। তাতে তৃণমূলের ২ জন ও আইএসএফের এক জনের মৃত্যু হয়। তিনিই পাল্টা আদালতকে প্রশ্ন করেন, “এই রাজনৈতিক সংঘর্ষের মাঝে কি আদালতের ঢোকার প্রয়োজন রয়েছে, বিবেচনা করুন।”
এরপরই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, পুলিশ কী করছিল?এত গোলমালে পুলিশ কী করেছে? এরপরই বিচারপতি বলেন, “আদালত আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও শান্তি বজায় রাখার ব্যাপারে আগ্রহী।”
রাজ্যের তরফে তখন বলা হয়, পুলিশ মনোনয়ন জমা দেখবে, অন্য সমস্যা দেখবে না কি নিরাপত্তা দেখবে? একের পর এক লোককে হাইকোর্ট নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। তারপরে বিডিও অফিসে বিরাট গন্ডগোল। ভাঙচুর চলেছে। পুলিশের পক্ষে কোন কোনটা দেখা সম্ভব?
তখনই মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এটা স্পষ্ট পুলিশ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিয়ে মনোনয়ন দেওয়ার কাজে ব্যর্থ হয়েছে। এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।” এই মামলার বিচারপতি আরও নির্দেশ দিয়েছেন, ১৪-১৬ জুন পর্যন্ত সব এলাকায় থানা ও বিডিও অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ পেন ড্রাইভে জমা দিতে হবে। ১০ দিনের মধ্যে পুলিশকে হলফনামা দিয়ে সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। পরের তিন দিনের মধ্যে মামলকারীরা তাঁর জবাব দেবেন।
দু’সপ্তাহ পরে মামলার শুনানি। ক্যানিংয়ে এক বিরোধী সমর্থকের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় বিধায়ক সওকত মোল্লা ও সন্দেশখালিতে শাজাহান শেখের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। ওই সব থানার ওসিদের সতর্ক করেছে আদালত।