সিজার মণ্ডল ও গয়া দণ্ডপাট : মাওবাদীদের নাম করে দেদার তোলাবাজির অভিযোগ ঝাড়গ্রামে। তোলাবাজি রুখতে কার্যত হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে খবর, গত শনিবার ১৮ জুন, বিনপুর-২ ব্লকের তিনজন হুমকি চিঠি পান। লাল কালিতে লেখা সেই চিঠি। চিঠির প্রেরক নিজেকে মাওবাদী সংগঠনের সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে ২ লক্ষ টাকা চান মাওবাদী পার্টি তহবিলের জন্য। শাসকদল সূত্রে খবর, এই তিনজনের একজন আবার পঞ্চায়েত সদস্য। বাকি দু’জন এঁড়গোদা পঞ্চায়েত এলাকার শিয়ারকেত্যা এবং ভুরসাতোরা গ্রামের দুই রেশন ডিলার। চিঠি পাওয়ার পর থেকেই আতঙ্কে ভুগছেন ওই তিনজনের পরিবার। সূত্রের খবর, তিনজনেই জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন।
এর আগে গত ৪ জুন ঝাড়গ্রাম শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে দহিঝুরিতে কর্মরত একজন স্পেশাল হোমগার্ড এইরকমই একটি চিঠি পান। অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দিলে খুন করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয় ওই চিঠিতে। এদিকে জেলা পুলিশ সেই চিঠি নিয়ে তদন্তে নামতেই গোলমাল ঠেকে। বেশ কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পান তদন্তকারীরা। চিঠির উপর অশোক স্তম্ভের ছাপ, নীচে শেখ মুন্না নামে একজনের সই নজরে আসে। সঙ্গে লেখা মিডিয়া ইনচার্জ, সল্টলেক।
জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “মাওবাদীরা অশোক স্তম্ভ ছাপ মেরে চিঠি দেয় বলে কস্মিনকালে শুনিনি। আমরা নিশ্চিত এর পিছনে কোনও দুষ্কৃতীচক্র কাজ করছে। যারা মানুষের মধ্যে মাওবাদী নামের আতঙ্ক সৃষ্টি করে তোলাবাজি করার চেষ্টা করছে।” ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান এবং রেশন ডিলাররাও এরকম চিঠি পেয়েছেন। চিঠির প্রাপক পঞ্চায়েত প্রধানকে ফোন করা হলে, তিনি চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে দলের অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারবেন না বলে জানান।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এরকম চিঠি অনেকেই পাচ্ছেন। তবে অধিকাংশ মানুষ ভয়ে প্রশাসনকে জানাচ্ছেন না। তাঁরা চিঠিতে অসঙ্গতিটাও বুঝতে পারছেন না। লালগড় আন্দোলনের সময়ের সেই মাওবাদী আতঙ্কের স্মৃতি এখনও টাটকা তাঁদের মনে। ভয়ে অনেকে তাই টাকাও দিয়ে দিচ্ছেন। প্রশাসন তা জানতেই পারছে না।
এর আগে ঝাড়গ্রাম এলাকায় পর পর পাওয়া মাওবাদী পোস্টারের পিছনেও এরকমই তোলাবাজি চক্রের হদিশ পায় পুলিশ। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এক স্পেশাল হোম গার্ড, পুলিশের দু’জন ‘ইনফরমার’-সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জানা যায়, এলাকায় মাওবাদী পোস্টার মেরে আতঙ্ক তৈরি করে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, স্পেশাল হোম গার্ডের চাকরি এবং পঞ্চায়েতস্তরের সরকারি কাজের বরাত নিয়ে পুরনো জনসাধারণের কমিটির লোকজনের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ আছে। তাঁদের মধ্যেই কিছু লোক মাওবাদী আতঙ্ক ছড়িয়ে তোলাবাজি চালাচ্ছেন বলেও খবর রয়েছে পুলিশের কাছে। তাঁদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে দাবি করেন ওই পুলিশ কর্তা।