কলকাতা: আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এক ব্যক্তি। স্ত্রীও ছিলেন দেখভালের জন্য। রাতে স্বামীকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপর হাসপাতালের কর্মীরা ওই মহিলাকেও ঘুমিয়ে পড়তে বলেন। হঠাৎই মহিলার ঘুম ভাঙতে দেখেন স্বামী সঙ্গে নেই। এরপর রাত কেটে ভোরের আলো ফুটলেও খোঁজ মেলেনি বছর সত্তরের গোপাল ঘোষের। শনিবার দিনভর খোঁজ চলে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। এরপরই রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ আমতলা গ্রামীণ হাসপাতাল লাগোয়া একটি পানাপুকুর থেকে উদ্ধার হয় একটি মৃতদেহ। পরে ঘোষ পরিবারের লোকেরা শনাক্ত করে জানান দেহটি গোপালবাবুরই। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাড়ির লোকেরা। হাসপাতালের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দাবি করেন গোপাল ঘোষের ছেলে-মেয়ে। সত্তরের ওই বৃদ্ধকে মেরে পুকুরে ফেলা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ভিডিয়োগ্রাফির মাধ্যমে দেহটি পুকুর থেকে তোলা হয়। আপাতত ময়নাতদন্ত করা হবে। তারপর দেহ তুলে দেওয়া হবে পরিবারের হাতে।
কী ঘটেছিল? শুক্রবার রাতে শ্বাসকষ্ট নিয়ে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হন মগরাহাট-১ ব্লকের উস্তি থানার শেরপুরের ঘটিহারানিয়ার বাসিন্দা গোপাল ঘোষ। গোপাল ঘোষের মেয়ে তুলিকা মণ্ডল বলেন, “বৃহস্পতিবার শ্বাসকষ্টের কারণে বাবাকে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করাই। শুক্রবার বাবা ভাল ছিল। শনিবার ভোরবেলা থেকে বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই খুঁজেছি। অথচ বারবার হাসপাতালের লোকজনকে বললেও ওরা কোনওরকম সহযোগিতা করেনি। পরে বলছে দেহ পাওয়া গেছে। আমাদের মনে হচ্ছে ওরা ইনজেকশন দিয়ে মেরে বাইরে দেহ ফেলে রেখে গিয়েছে। হাসপাতাল সব দায় এড়াতে চাইছে। আমরা শনিবার দিনভর খুঁজেছি এখানেই। কিছু তো পাইনি। আর রবিবার ডুবুরি নামাল। শনিবার কেন আনল না?”
অন্যদিকে গোপাল ঘোষের বড় ছেলে সুরজিৎ ঘোষ বলেন, “শুক্রবার রাতেই বাবা নিখোঁজ হয়েছে। শনিবার রাতে দেহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফেলে দিয়ে গিয়েছে। বাবা সুস্থ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু অনবরত ইনজেকশনের কারণে বাবার মাথার ভিতর একটা অস্বস্তি হচ্ছিল। কখনও ভুলভাল বকছিল। কিন্তু আগে কোনও মানসিক সমস্যা বাবার ছিল না। আমার বাবার খুব স্মরণশক্তি। শুক্রবার রাতে বাবাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য একটা ইনজেকশন দিয়েছিল। আমার মা ছিল বাবার সঙ্গে। ওরা বলল বাবা ঘুমিয়ে পড়েছে মা যেন ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর মায়ের ঘুম ভাঙতে দেখে বাবা নেই। ভোর পাঁচটায় মা আমাদের জানায়। আমরা বলি সিসিটিভি ফুটেজ দেখান। তখন বলছে সবকিছুর একটা নিয়ম আছে। অফিস টাইম জানেন?”
নিহতের ভাইপো স্বরূপ ঘোষ বলেন, “এটাকে চক্রান্ত করে করেছে। আগের দিন রাতে মানুষটা ভাল ছিল। আমার মনে হয় কোনও কিছু হয়ত ওদের বলেছিল, সে কারণে এটা করেছে। যে মানুষটা হেঁটে যাওয়ার ক্ষমতা নেই সে কোথাও কীভাবে যাবে?” যদিও এমন বিস্ফোরক অভিযোগের পরও মুখ খুলতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।