নিম্নচাপের গজগতিতেই একটানা বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গে, পিছনে কার হাত?

TV9 Bangla Digital | Edited By: ঋদ্ধীশ দত্ত

Jul 29, 2021 | 10:30 PM

West Bengal Weather Forecast: আবহবিদরা বলছেন, নিম্নচাপের এই গজগতির জন্যই একটানা বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে

নিম্নচাপের গজগতিতেই একটানা বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গে, পিছনে কার হাত?
ফাইল ছবি

Follow Us

কমলেশ চৌধুরী: একটানা বৃষ্টিতে দুয়ারে দুর্যোগ। নেপথ্যে নিম্নচাপের গজগতি। তারও নেপথ্যে, নিম্নচাপের পথে পশ্চিমি অক্ষরেখার বাধা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের কাটাছেঁড়ায় উঠে আসছে এই তথ্যই। বুধবার সকালের মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে বাংলা লাগোয়া বাংলাদেশের উপর সরে আসে। এর পর বাংলার উপর দিয়ে ঝাড়খণ্ড, বিহারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা তার। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালেও নিম্নচাপের অবস্থান বদলায়নি। দুপুরের পর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চল দিয়ে রাজ্যের অন্দরে ঢুকতে শুরু করে। বিকেল নাগাদ নিম্নচাপের কেন্দ্র চলে আসে দক্ষিণবঙ্গের উপরে। কিন্তু তখনও তার অর্ধেক শরীর বাংলাদেশে।

আবহবিদরা বলছেন, নিম্নচাপের এই গজগতির জন্যই একটানা বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্য়োপাধ্যায় বলেন, “নিম্নচাপ দ্রুত সরে গেলে বৃষ্টিপাতের সময়সীমা কম হত। কিন্তু যেহেতু নিম্নচাপ দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের উপরেই ঠায় দাঁড়িয়ে, তাই বৃষ্টিও চলছে একটানা।”

নিম্নচাপের পায়ে বেড়ি পরাল কে? সঞ্জীববাবুর ব্যাখ্যা, “নিম্নচাপের সামনে একটি পশ্চিমি অক্ষরেখা রয়েছে। সেটি সামনে এগোতে বাধা দিচ্ছে। ফলে এগোনোর গতি খুব শ্লথ।” বাধার পাহাড় ঠেলে এগোনোর সুযোগ এলেই ঝাড়খণ্ড-বিহারের পথে পা বাড়াবে নিম্নচাপ। সেই ইঙ্গিতকে সামনে রেখে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, শুক্রবার মূলত পশ্চিমাঞ্চলেই বেশি বৃষ্টি হবে। পুরুলিয়ায় ভারী থেকে অতি ভারী অর্থাত্‍, ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। ভারী বৃষ্টি হতে পারে বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। কলকাতা ও উপকূলীয় জেলাগুলিতে মূলত হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। তবে সবটাই নির্ভর করবে নিম্নচাপের নড়াচড়ার উপর।

শনিবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। সোমবার নাগাদ নিম্নচাপ উত্তর ভারতের দিকে সরে গেলে ভারী বৃষ্টি শুরু হতে পারে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে।

মেঘে ঢাকা দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। বৃহস্পতিবার দুপুরের উপগ্রহ চিত্র

একে দুলকি চালে চলা নিম্নচাপ, তার উপর নিম্নচাপের টানে দক্ষিণে সরে আসা মৌসুমি অক্ষরেখা– সবমিলিয়ে অতি সক্রিয় বর্ষা। মৌসুমি বাতাসের দাপট কতটা, বৃষ্টির অঙ্কেই তা স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় খড়্গপুরে বৃষ্টি হয়েছে ২৫৯ মিলিমিটার। মেদিনীপুর শহরে বৃষ্টির পরিমাণ ২৩০ মিলিমিটার। ২১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে নারাজোলে। এছাড়াও চরম ভারী বৃষ্টি হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের দুর্গাচক (২২০ মিলিমিটার), হলদিয়ায় (২১৫ মিলিমিটার)। এর পরও বৃহস্পতিবার গোটা দিন ধরে বৃষ্টি চলেছে কলকাতা, উপকূলীয় বাংলা ও পশ্চিমাঞ্চলে। ফলে বৃষ্টিপ্রাপ্তিও হয়েছে অনেক বেশি। যেমন সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে আরও ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে মেদিনীপুরে। হলদিয়ায় যোগ হয়েছে ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি। ক্যানিংয়ে ৩৩ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ২৬৪ মিলিমিটার। ডায়মন্ড হারবারে ৩৩ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ২৭৬ মিলিমিটার। এর ফলে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে ৮৭ মিলিমিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই ডুবেছিল কলকাতা। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ৪৭ মিলিমিটার। সবমিলিয়ে ১২৩ মিলিমিটার। জমা জলে দুর্ভোগের চূড়ান্ত, সঙ্গে একরাশ বিরক্তি।

আবহবিদদের পর্যবেক্ষণ, নিম্নচাপের গতি যেহেতু ধীর, তাই দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার উপর থাকা মেঘপুঞ্জও প্রায় এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দিয়েছে। মাঝেমধ্যে শুধু সাময়িক বিরতি।

এখানেই উঠে আসছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রসঙ্গ। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বারবার বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টির প্রবণতা বেড়েই চলেছে। জার্মানি থেকে চিন, মহারাষ্ট্র থেকে বাংলা– সর্বত্র এক ছবি। চাষের জন্য বর্ষায় বৃষ্টি দরকার। নিম্নচাপও তাই জরুরি। কিন্তু অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি হলে, লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয় বেশি। দিনকয়েক আগে চিনের হেনান প্রদেশের ঝেংঝৌ শহরে ২৪ ঘণ্টায় ৬২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তার মধ্যে এক ঘণ্টাতেই ২০১ মিলিমিটার। সব রেকর্ড ভেঙে একদিনে ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টি পেয়েছে মহারাষ্ট্রের মহাবালেশ্বর। তার আগের দিনই হয়েছিল ৪৮০ মিলিমিটার। অর্থাত্‍, মাত্র দু’দিনেই ১০৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি। যার একমাত্র ভবিতব্য, বন্যা। খড়্গপুর, মেদিনীপুর, হলদিয়াতেও প্রায় এক ছবি। গোটা জুলাইয়ের যা প্রাপ্তি, তার অর্ধেকের বেশি হয়ে গিয়েছে একদিনে। পরিণতি, রেললাইনে ধস থেকে বানভাসি শহর। দুয়ারে দুর্যোগের এখানেই শেষ নয়। ঝাড়খণ্ড, বিহারে প্রবল বৃষ্টি হলে বিপদ বাড়াবে পড়শি রাজ্যের নদী, জলাধারের জলও। আরও পড়ুন: শহরজুড়ে বর্ষাতি মন ভিজছে… রইল শ্রাবণ কলকাতার জলছবি

Next Article