কলকাতা: প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের (Jadeep Dhankar) সঙ্গে সম্পর্টা মোটেই ভাল ছিল না রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee)। বিগত কয়েক বছরে দুজনের সম্পর্কে ক্রমাগত ফাটল দেখে এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। এমনকী জগদীপ জমানায় রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত প্রায়শই খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছিল। কিন্তু, এখন ধনখড়ের আসনে লা গনেশন। কিন্তু, তার সঙ্গে রাজ্যের সংঘাতের খবর বিশেষ শোনা যায়নি উল্টে তাঁর বাড়িতে সম্প্রতি এক পারবারিক অনুষ্ঠান থেকে ঘুরে এসেছেন মমতা। তবে কী রাজ্য-রাজ্যপাল সম্পর্কের রসায়নে ক্রমেই উন্নতি ঘটছে? “রাজ্য চেষ্টা করছে বাঁচার জন্য। আজকে ১ হাজার কোটি টাকা এসেছে। হয়তো রাজ্যপালের হাতেপায়ে ধরে রাজ্যপালকে সেটিং করে কিছু করার চেষ্টা করবেন ওনারা।” এ প্রসঙ্গে অকপট দাবি বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh)।
টিভি-৯ বাংলার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে এসে দিলীপের সাফ দাবি, রাজ্য-রাজ্যপালের সুসম্পর্কই থাকা উচিৎ। আগের রাজ্যপালও সেই চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু রাজ্যের জন্যই ক্রমাগত সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। এদিকে বর্তমানে ঋণের ভারে জর্জরিত রাজ্য। কোষাগারও ফাঁকা। রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ নিয়েও বাড়ছে চাপানউতর। এমনকী বিজেপি নেতাদের দাবি অবস্থা যে দিকে যাচ্ছে তাতে কিছুদিন পর কর্মীদের বেতন দিতে পারবে না মমতার সরকার। দিলীপের দাবি সেকারণেই এখন রাজ্যপালের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ ভাল রাখা ছাড়া আর কোনও উপায়ই নেই রাজ্যের কাছে।
এ প্রসঙ্গে দিলীপের মত, “রাজ্য-রাজ্যপাল সম্পর্ক ভালো হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে হয় না। বাংলায় সিপিএমের সময় হয়নি। কংগ্রেসের সময় জানি না কী ছিল। তৃণমূলের সময় হয়নি। গত ৪০ বছর ধরে দুই মেরুতে লড়াই। ক্ষতিটা পশ্চিমবঙ্গের হয়েছে। আজকে বাংলা গাড্ডায় পড়েছে বোঝা যাচ্ছে। যা ইচ্ছা করব মনোভাব। আইন-সংবিধান মানব না। রাজ্যপাল সাংবিধানিক পোস্টে রয়েছেন। সংবিধান মেনে যাতে কাজ হয় সেটা দেখা ও সরাকের ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দেওয়া তাঁর কাজ। সেটা চেষ্টা করলেই তাঁকে শত্রু করে দেওয়া হচ্ছে। গালাগালি দেওয়া হচ্ছে।” এ কথা বলতে গিয়েই জগদীপ ধনখড়ের প্রসঙ্গ টেনে দিলীপ বলেন, “আগের রাজ্যপালও সম্পর্ক ভাল রেখেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি গিয়েছেন, চা খেয়েছেন, হাসিমুখে ফটো তুলেছিলেন। পরিণাম কী হল? কিছুদিন পরে জানলেন চোরেদের রাজত্ব চলছে। ইনিও দেখছেন চেষ্টা করছেন। যখন দেখবেন পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে তখন তিনিও বলবেন।” এরপরই ‘সেটিং তত্ত্বের’ কথা বলতে গিয়ে দিলীপ বলেন, “রাজ্য চেষ্টা করছে বাঁচার জন্য। আজকে ১ হাজার কোটি টাকা এসেছে। হয়তো রাজ্যপালের হাতেপায়ে ধরে রাজ্যপালকে সেটিং করে কিছু করার চেষ্টা করবেন ওনারা। চেষ্টা হবে। সেটা দেখতে পারবেন ভবিষ্যতে। নিশ্চয় চেষ্টা করবেন। কারণ ঝগড়া করে তো লাভ হল না। কারণ এ ছাড়া তো আর কোনও রাস্তা নেই সরকার বাঁচাবার।”
এদিকে একদিন আগেই রাজ্যপালের বাড়িতে আমন্ত্রণ রাখতে মমতার যাওয়া প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নাম না করে বক্রোক্তি করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, “কে কার বাড়ি যাচ্ছে। কে কার জন্মদিনে যাচ্ছে সব নজরে আছে।” যদিও এ প্রসঙ্গে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “বিধানসভার বিরোধী দলনেতা কতখানি নীচে নামতে পারেন সেটাই দেখা যাচ্ছে। কে কার বাড়ি যাচ্ছে তার উপর নজর রাখছেন। এই ছোট রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গে মানায় কখনও।”