West Bengal Day: ঠিক কী হয়েছিল ২০ জুন? কেন ওই দিন পশ্চিমবঙ্গ দিবসে এত আপত্তি? ব্যাখ্যা দিলেন সুগত বসু
West Bengal Day: খাতায় কলমে ঠিক কী হয়েছিল ২০ জুন? কেন ওই দিন পালন করা যাবে না পশ্চিমবঙ্গ দিবস? কী বলছে ইতিহাস?
কলকাতা: কেউ বলছেন পয়লা বৈশাখ, কেউ বলছেন ১৫ অগস্ট, কেউ বলছেন ১৯ অগস্ট, আবার কেউ বলছেন রাখির কথা। হ্যাঁ, পশ্চিমবঙ্গ দিবস (West Bengal Day) কবে পালন করা হবে সেই সংক্রান্ত বৈঠকে এই সমস্ত দিনগুলিরই প্রস্তাব রাখলেন বিশিষ্ঠজনেরা। মতপার্থক্য়ও দেখা গেল অনেকের মধ্যে। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০ জুন রাজভবনে পালন করা হয় পশ্চিমবঙ্গ দিবস। যদিও তার তীব্র বিরোধিতা করে তৃণমূল কংগ্রেস। দেশভাগের ক্ষত জড়িয়ে এমন একটা দিনে কোনওভাগেই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করা উচিত নয় বলে মত বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও (CM Mamata Banerjee)। সে কারণেই এবার নতুন দিনক্ষণ ঠিক করতে বিশিষ্টজনদের মতামত চাইছে বাংলার সরকার। এদিন নবান্নে সেই আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে পয়লা বৈশাখকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে পালন করার জন্য জোরালো সওয়াল করলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ সুগত বসু।
সাফ বললেন, “ইতিহাসের কথা মাথায় রেখে আমাদের মনে হয় বাংলা দিবস হিসাবে একটা অন্য শুভ দিন বেছে নেওয়া উচিত। আমার মনে হয় দিনটা পয়লা বৈশাখ হলে ভালই হয়। আর নৃসিংহদার কথা প্রসঙ্গে বলতে হয় রাখি বন্ধন কিন্তু রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন ১৬ অক্টোবর। কারণ সেই দিন কার্জন সাহেব বঙ্গবঙ্গ করে দিয়েছিলেন। তাঁর প্রতিবাদ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ রাখি বন্ধন করেছিলেন। তাই ১৬ অক্টোবর কার্জনের বঙ্গভঙ্গের দিন, আবার রবীন্দ্রনাথের রাখি বন্ধনের দিন। এটাও একটু মাথায় রাখা দরকার। তাই বাংলার সংস্কৃতির কথা মাথায় রাখলে পয়লা বৈশাখকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে বিবেচনা করলে ভাল হবে।” যদিও তাঁর ভাবনায় যে ১৯ অগস্টও ছিল সে কথাও এদিন জানান তিনি।
বলেন, “অগস্টেই যদি কোনওদিন বেছে নিতে হয় তাহলে বলব ১৯ অগস্টের কথা ভাবা যেতে পারে। কারণ সেদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সুভাষচন্দ্র বসু একইসঙ্গে মহাজাতির আবাহন করেছিলেন এই কলকাতা শহরে। তা ছাড়া আমাদের বিধানসভায় তো ঠিক হয়েছে আমাদের রাজ্যের নাম বাংলা হওয়া উচিত।”
কিন্তু, খাতায় কলমে ঠিক কী হয়েছিল ২০ জুন? কেন ওই দিন পালন করা যাবে না পশ্চিমবঙ্গ দিবস? কী বলছে ইতিহাস? এ প্রসঙ্গে সুগত বসু বলেন, “২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে পালনে আপনার আপত্তি সত্ত্বেও রাজভবনে অনুষ্ঠান হয়েছিল। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা একটা স্বাধীন ঐক্যবদ্ধ ভারত, ঐক্যবদ্ধ বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন ভেঙে গেল ৩ জুন ১৯৪৭ সালে। ওইদিন ইরেজ ভাইসরয় মাউন্টব্যাটন তাঁর দেশভাগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। ২৮ মে পর্যন্ত একটা সম্ভাবনা ছিল যে বাংলা অন্তত অবিভক্ত থাকবে। শরৎচন্দ্র বসু আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। গান্ধীজির আশীর্বাদ তিনি নিয়েছিলেন। কিন্তু, ৩ জুনের পরে আর ইংরেজদের এই ভাগ করার পরিকল্পনা আটকানো গেল না। কারণ ততদিনে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি এই পার্টিশন প্ল্যান স্বীকার করে নিল ১৯৪৭ সালের ১৫ জুন। তাই ২০ জুন আইনসভায় যা ঘটেছিল সেটা আমাদের দেশভাগের মর্মান্তিক ইতিহাস।” তাঁর কথায় উঠে আসে পঞ্জাব প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, “বাংলার মতো একই ছবি দেখা গিয়েছিল পঞ্জাব ভাগের ক্ষেত্রে। ২৩ জুন সেখানেও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। কিন্তু, কোনও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন পঞ্জাবি ২৩ জুনকে পঞ্জাবের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে মেনে নেবে না। কারণ তাঁরা জানে দেশভাগের সময় কত মানুষ মারা গিয়েছিলেন। কোটি কোটি মানুষ ঘর ছাড়া হয়েছিলেন।”