কলকাতা: যাদবপুর তো লাল দুর্গ? প্রশ্নটা করেছিলেন সাংবাদিক। ভাবতে সময় নেননি সায়নী। বলেই ফেললেন, ‘লাল কাপড়টা এখন তো শুধু বিরিয়ানির হাঁড়িতে দেখা যায়।’ সোমবার রাতে যাদবপুরে প্রচারে বের হন তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ। পাশেই ছিলেন কাউন্সিলর, বিধায়ক। হুড খোলা গাড়িতে রোড শো করেন তিনি। একদা বাম দুর্গ বলেই পরিচিত যাদবপুর। ১৯৬০ থেকে ১৯৮৪। টানা ২৪ বছর যাদবপুর ছিল সিপিআইএমের দখলে। ১৯৮৪ সালে পালাবদল। বামেদের সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে প্রথমবার লোকসভার সদস্য হন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৯ সাল থেকে যাদবুপর লোকসভা কেন্দ্রে টানা জয়ী হয়ে আসছে তৃণমূল। যাদবপুরে এবার বামেদের বাজি তরুণ ছাত্রনেতা সৃজন ভট্টাচার্য। আর তৃণমূলের মুখ সায়নী ঘোষ। ‘বামেদের দুর্গ’ প্রসঙ্গে কথা বলতেই সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন সায়নীকে। সায়নী বলেন, “লাল কাপড়টা এখন সবচেয়ে বেশি বিরিয়ানির হাঁড়িতে দেখা যায়। এত যে লাল দুর্গ বলা হয়, সেটা সংবাদমাধ্যমই করছে, রেজাল্টে তার প্রতিফলন পড়ে না।” পাল্টা সাংবাদিককেই তিনি বলেন, “এত যে লাল দুর্গের কথা বলো, তাহলে বিধানসভাতে তো তার প্রতিফলন পড়তে পারে, লোকসভায় পরের কথা। দিল্লি দূর হ্যয়…. মানুষ অনেক দূরে সরে গিয়েছে সিপিএমের থেকে।” তবে এবার সৃজনকে মুখ করার বিষয়ে সায়নী বলেন, “বামেদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। নতুন ছেলেমেয়েদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা ভালো বিষয়। কিন্তু ওই… দলের প্রতি আর মানুষের ভরসা নেই। ”
১০ মার্চ থেকে প্রচার শুরু করেছেন সায়নী। ৩৫-৩৬ দিন হয়ে গিয়েছে, টানা প্রচার চালিয়েছেন। কেমন অভিজ্ঞতা? সায়নী বললেন, “একটা ঘোরের মধ্যে আছি। আমি চেষ্টা করছি, যতটা মানুষের পাশে থাকা যায়।”
অভিনেত্রী, নেত্রী আবার প্রার্থী… কীভাবে সামলাচ্ছেন সায়নী? তৃণমূলের প্রার্থী বললেন, “দল আমার সঙ্গে অত্যন্ত সহযোগিতা করে। আমার বিধায়ক, কাউন্সিলর আমার পাশে রয়েছে। তাঁরা এলাকায় থেকে কাজ করেন। তার তো একটা বাড়তি সুবিধা থাকে। আমি যে ওয়ার্ডগুলোতে যাচ্ছি, সেখানকার মানুষের জন্য তো সরাসরি কোনও কাজ করতে পারিনি এখনও, তবে ওঁরা করেছেন, আর সেই সুবিধা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিষেবা আমাকে সাহায্য করছে।”
যাদবপুরের মতো একটা জায়গায় তাঁকে প্রার্থী করার ব্যাপারে তিনি ‘মমতাদি’র কাছে কৃতজ্ঞ। এই যাদবপুরেই তৃণমূল প্রার্থী করেছিল আরেক অভিনেত্রী, মিমি চক্রবর্তীকে। কিন্তু তিনিই সাংসদ পদ ছেড়ে দিতে চেয়ে ইস্তফাপত্র জমা দেন, রাজনীতি থেকে কয়েক কদম পিছিয়ে এসেছেন। সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই সায়নী বলেন, “মিমি সবসময়েই স্বীকার করে এসেছে, আগে সে অভিনেত্রী, পরে রাজনীতিবিদ। সে নিজেও সেটা স্বীকার করেছে। কিন্তু আমি ফুল টাইম রাজনীতিবিদ।”
যাদবপুরের মেয়ে সায়নী, তার যে বাড়তি সুবিধা তিনি পাবেন, সে ব্যাপারে প্রত্যয়ী সায়নী ঘোষ।বিরোধী প্রার্থী প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সায়নী বলেন, “অনির্বাণবাবু, (অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়) বিজেপির প্রার্থী, তিনি তো দিল্লি থেকে রাজনীতি করছেন, তো এখানকার মানুষের প্রয়োজন পড়লে কী দিল্লি যাবেন? সৃজন এখানকার ছেলে, তাঁকে এখানে ক’জন মানুষ মিটিং মিছিলে দেখেছেন? কিন্তু সায়নী ঘোষ তিন বছর ধরে বাংলা জুড়ে কাজ করছে, তার জন্য জেলে যাচ্ছে, ইডি আসছে, যারপরনাই হেনস্থা হতে হচ্ছে, তবুও মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছে, এখানে গণদেবতা শেষ কথা বলে।”
শেষে সায়নী বলেন, “দিদি যে প্রতিশ্রুতি দেন, সেটা রাখেন। লাভ ছাড়া ক্ষতি নাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া গতি নাই।”