কলকাতা: কেন খুন করা হয়েছে ‘তিলোত্তমা’-কে? এই খুন কি পূর্ব-পরিকল্পিত? গত ৫ মাসে বারবার এই প্রশ্ন উঠেছে। তিলোত্তমাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রাইকে কেউ খুনের জন্য নিয়োগ করেছিল কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে। সোমবার আরজি কর কাণ্ডে সাজা ঘোষণা করেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। তিলোত্তমাকে খুনের মোটিভ কী ছিল, নির্দেশনামায় উল্লেখ করেছেন বিচারক।
নির্দেশনামায় বিচারক উল্লেখ করেন, এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, খুনের মোটিভ কী? নির্দেশনামায় বিচারক লেখেন, নির্যাতিতা ও অভিযুক্ত পরস্পরকে চিনতেন না সেটা স্পষ্ট। তাঁদের মধ্যে কোনও শত্রুতাও ছিল না। নির্যাতিতাকে খুনের জন্য কেউ সুপারিও দেয়নি অভিযুক্তকে।
তাহলে অভিযুক্ত নির্যাতিতাকে খুন করলেন কেন? নির্দেশনামায় বিচারক উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত স্বীকার করেছেন যে ঘটনার দিন মদ্যপ অবস্থায় তিনি হাসপাতালের চারতলায় পৌঁছেছিলেন। তবে তিনি যে সেমিনার রুমে যাননি, তার কোনও অকাট্য প্রমাণ দিতে পারেননি।
অন্যদিকে, তদন্তকারীদের হাতে তাঁর সেমিনার রুমে ঢোকার প্রমাণ রয়েছে। সেক্ষেত্রে একটাই বিকল্প যে ওইদিন সেমিনার রুমে ঢুকেছিলেন অভিযুক্ত। এবং আকস্মিক লালসা থেকে নির্যাতিতাকে আক্রমণ করেন। নির্দেশনামায় বিচারক উল্লেখ করেন, নির্যাতিতা যে সেমিনার রুমে রয়েছেন, তা আগে জানতেন না অভিযুক্ত। এই অপরাধ পূর্ব পরিকল্পিত নয়।
আরজি কর হাসপাতালের যেকোনও জায়গায় যে কেউ যখন খুশি চলে যেতে পারেন বলেও নির্দেশনামায় উল্লেখ করেছেন বিচারক। একাধিক সাক্ষীর বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে নির্দেশনামায়। এক সাক্ষী জানিয়েছেন, এর আগেও এক মদ্যপ সেমিনার রুমে ঢুকে পড়েছিলেন। তিনি চিৎকার করেছিলেন। পরে চেস্ট ডিপার্টমেন্টের এইচওডি-কে জানিয়েছিলেন। কিন্তু, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নির্দেশনামায় বিচারক লিখেছেন, বিভিন্ন তথ্যে এটা প্রমাণিত যে হাসপাতালের যেকোনও জায়গায় যখন খুশি যে কেউ যেতে পারেন। এটা নিরাপত্তার গাফিলতি, বিশেষ করে যেসব ডাক্তার রাতে ডিউটি করেন তাঁদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে।
বিচারকের নির্দেশনামা নিয়ে আইনজীবীদের বক্তব্য, নির্দেশনামায় বিচারক উল্লেখ করেছেন সেমিনার রুমে তিলোত্তমাকে খুন করা হয়েছে। ফলে অন্য কোথাও খুন করে দেহ সেমিনার রুমে রাখার অভিযোগ খারিজ করা হয়েছে।