কলকাতা: গত বছর থেকেই স্কুলমুখী হয়নি পড়ুয়ারা। বাড়িতেই চলছে অনলাইন ক্লাস। ল্যাপটপ-মোবাইলে মুখ গুঁজে চলছিল নেটভিত্তিক পড়াশোনা। ছাত্রছাত্রীদের বইমুখো করতে বহুদিন ধরে শিক্ষকমহল থেকে ‘মডেল অ্যাক্সিভিটি টাস্ক’ (Model Activity Test) চালু করার দাবি উঠছিল। গত বছর তা চালু হয় বটে, কিন্তু মাঝপথেই মুখ থুবড়ে পড়ে পরিকল্পনা। অবশেষে আবার তাতে সবুজ সঙ্কেত মিলল। অর্থাৎ মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক চালু করার ব্যাপারে নতুন করে অনুমোদন দিল রাজ্য সরকার।
ইতিমধ্যেই রাজ্য শিক্ষা কমিশন ‘বাংলা শিক্ষার পোর্টাল’এ প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণির ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সে ব্যাপারে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। জুন মাসে মিড ডে মিল বিতরণের সময়ে অভিভাবকদের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে যাবে সেই টাস্ক। স্কুলের কম্পোজিট গ্র্যান্ট থেকে প্রিন্ট করে প্রতিলিপি বার করে নেওয়া হবে।
মডেল অ্যাক্টিভিট টাস্কের সীমাবদ্ধতা
তবে শিক্ষকদেরই একাংশ বলছেন, এক্ষেত্রে একটি সমস্যা রয়েছে। কী সেই সমস্যা? বিষয়টা হচ্ছে, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড ডে মিল চালু রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের কাছে এই টাস্ক পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু নবম ও দশম শ্রেণির জন্য মিড ডে মিল চালু না থাকায় কীভাবে এই মডেল টাস্ক দেওয়া হবে, তার কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশ নেই।
তবে বিষয়ে শিক্ষকরা এ বিষয়ে একাধিক খামতির অভিযোগ তুলছেন। শিক্ষকমহলের একাংশের মতে, স্কুল থেকে যে প্রিন্ট আউট বার করা হয়, তা অনেকক্ষেত্রে পড়েই থাকে। আবার ছাত্রছাত্রীদের পাঠানো হলেও, তা অনেক সময় জমা দেয় না তারা।
প্রশ্নের মুখে মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্কের মান
মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্কের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁদের মতে, শ্রেণি অনুযায়ী এই টাস্ক অত্যন্ত নিম্ন মানের। বিষয় পিছু মাত্র ৫-৬টি প্রশ্ন কোনওভাবে দিয়েই দায়সারা হয়। ফলে আগ্রহ খুঁজে পায় না ছাত্রছাত্রীরা।
খরচ টানতে ব্যর্থ রাজ্যের একাধিক স্কুল
এমনকি গত বছর স্কুলগুলি নিজের খরচে মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্কের প্রিন্ট আউট বার করলেও, সেই টাকা এখনও রাজ্যের তরফে তারা পায়নি। সেক্ষেত্রে গত বছর দেখা গিয়েছে, অনেক স্কুল বোর্ডে সেই টাস্কের প্রতিলিপি টানিয়ে দিয়েছে। কিংবা পড়ুয়াদের নিজ দায়িত্বে তা প্রিন্ট আউট করতে বলা হয়েছে। কিছু খামতি সেখানেও রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “ধরুন প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পর্যন্ত কোনও স্কুলে ছাত্রছাত্রী আছে ৩ হাজার। এবার প্রত্যেকটা বিষয়ে টাস্ক দু-তিন পাতা করে থাকলে ৯ হাজার প্রিন্ট আউট করতে হবে। কিন্তু এই প্রিন্ট আউট বার করার টাকা দিচ্ছে না শিক্ষা দফতর। মুখে বলছে এরকম কথা। কাজে অন্য কথা। এটা একটা প্রহসন। এতে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে খুব একটা কার্যকরী হচ্ছে না।”
প্রায় একই কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু। তিনি বলেন, “গত বছরও এটা ছিল। কয়েকটা প্রশ্ন দেওয়া হয়, ছাত্রছাত্রীরা উত্তর লিখে পরের মাসে জমা দেয়। তবে এর কোনও ডেটা রাখা হয় না। কিংবা এর ভিত্তিতে কোনও মার্কশিটও তৈরি হয় না। কে কীভাবে লিখল, তা বোঝা যায় না। দু-চার জন বাদ দিয়ে হয়তো বেশিরভাগই বই থেকে দেখে টুকে দেয়। এটা নতুন কিছু নয়। ২০২১ এ ৬ মাস কেটে গিয়েছে। দুবার করার কথা ছিল। কিন্তু করেনি। এবার করল তাই আবার ঘটা করে বলা হচ্ছে। এটা একটা লুজ় সিস্টেম।”
অর্থাৎ মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক চালু কিন্তু তার কার্যকারিতা ও মূল্যায়ন নিয়ে ধন্দে শিক্ষকমহলই।