কলকাতা: “ওসব প্যাক ফ্যাক জানি না। এলাকা ভিত্তিক অনেক ভুল তথ্য আসছে। আমি যে তথ্য পাব, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।” সূত্রের খবর, কয়েকদিন আগে বিধায়কদের বৈঠকে এ কথা বলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, যে সংস্থার কৌশল মেনে লাগাতার সাফল্য পেয়েছে ঘাসফুল শিবির, যে সংস্থার কৌশল মেনে এসেছে বড়সড় সব জয়, সেই সংস্থার উপর থেকেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেললেন তৃণমূল সুপ্রিমো? প্রশ্ন ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশের মতে ভোট কুশলী সংস্থা আইপ্যাক নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধায়কদের বৈঠকে যা বলেছেন তা এক কথায় অসহযোগিতার বার্তা। কিন্তু, যতদূর জানা যায় আইপ্যাকের সঙ্গে ২০২৬ পর্যন্ত চুক্তি রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। এখন প্রশ্ন মমতার বক্তব্যের পর এবার কী হবে? আইপ্যাক কি কাজ চালিয়ে যাবে? নাকি বন্ধ করে দেবে কাজ? তৃণমূলের সঙ্গে কী তবে আইপ্যাক এর গাঁটছড়া ভাঙতে চলেছে?
এই প্রশ্নগুলোই এখন ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহল তো দূর, তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীদের কাছে সুস্পষ্ট কোনও ধারণা নেই। এ দিকে এ নিয়ে অন্য প্রশ্ন তুলছে তৃণমূলের ওল্ড ব্রিগেড। আইপ্যাকের সঙ্গে চুক্তির পুনর্নবীকরণ নিয়ে কি দলের ভেতর কোনও আলোচনা বা রেজলিউশন পাশ করানো হয়েছিল? কারও কারও গলায় এই প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, তাঁদের তীর তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই। তাঁরা বোঝাতে চান, এই গাঁটছড়া আসলে দলের সংগঠনের দায়িত্বে থাকা অভিষেকের তত্ত্বাবধানে হয়েছিল। সামগ্রিকভাবে দল এ নিয়ে অবগত নয়।
পরিসংখ্যান বলছে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে প্রথম তৃণমূলের সঙ্গে কাজ শুরু করে প্রশান্ত কিশোরের নেতৃত্বাধীন সংস্থা আইপ্যাক। আসে একুশের জয়। তারপরেই চুক্তি পুনর্নবীকরণ হয় আইপ্যাকের সঙ্গে। ভরা ‘মধুচন্দ্রিমার’ সেই পর্বে প্রথম আইপ্যাকের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের অবনতি ঘটে পুরসভার প্রার্থী তালিকাকে কেন্দ্র করে। প্রশান্তের নেতৃত্বে বানানো ওই তালিকা নাকচ করেন মমতা এবং তৃণমূলের ওল্ড ব্রিগেড। সেই সময়েও ভোট কুশলী সংস্থার সঙ্গে দলের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরবর্তীতে আইপ্যাকের বাংলার দায়িত্বে আসেন প্রতীক জৈন। তাঁর নেতৃত্বে ২০২৩ সালে অভিষেককে সামনে রেখে নবজোয়ার যাত্রা কর্মসূচির রূপদান করে আইপ্যাক।
পরবর্তীতে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনেও কাজ করে আইপ্যাক। বর্তমানে বাংলায় তাদের ২০০ কর্মী কাজ করছেন বলে খবর। তবে বিগয় কয়েক মাসে আবার আইপ্যাকের কর্মীদের ‘ফিল্ডে’ খুব একটা সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি। যদিও আইপ্যাক সূত্রে খবর প্রথা মাফিক ‘আইডিয়েশন’ এবং ‘গ্রাউন্ড মনিটরিং’ এর কাজ করে চলেছেন সংস্থার কর্মীরা। যা শুনে অনেকের প্রশ্ন তবে কী অতীতের ‘সম্পর্ক সঙ্কট’ এবারেও মিটে যাবে? এমন আশা রাখছে ভোট কুশলী সংস্থা? এ নিয়ে দলের প্রবীণ থেকে নবীন কোনও নেতাই কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না।
তবে দলের একাংশ মনে করছে এখনই আই প্যাক-তৃণমূল সম্পর্কের ‘দূরত্ব’ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না। জল কোনদিকে গড়়ায় তা বোঝার জন্য আরও একটু সময় নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।