কলকাতা: একদিকে, কারা বাইরে থেকে এসে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকছেন, তাঁদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য নথিবদ্ধ করা। অন্যদিকে, ভাড়াটিয়া বসিয়ে বাড়ির মালিকরা উপার্জন করলেও, সেই সংক্রান্ত কর পুরসভায় কারা কারা দিচ্ছে না সেটি ট্র্যাক করা। এক ঢিলে দুটি পাখি মারার জন্য এ-৭৫ ফর্ম চালু করেছিল কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation)। পুর কর্তারা আশা করেছিলেন, কলকাতার নাগরিক নিজেরা সতর্ক থাকতে এবং নিরাপদে থাকতে এই ফর্মটি পূরণ করে পাঠাবেন। কিন্তু সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা এবং কলকাতা পুলিশ যুগ্মভাবে এক উচ্চপর্যয়ের বৈঠক করে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকে এক আভ্যন্তরীণ রিপোর্টে উঠে আসে মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ সংশ্লিষ্ট ফর্ম পূরণ করে পুরসভায় জমা করেছে। এই রিপোর্ট যে যথেষ্ট উদ্বেগজনক তা স্বীকার করে নিচ্ছেন কলকাতা পুলিশ এবং কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের সিংহভাগ অংশ।
প্রায় ৫০ লক্ষের বাসিন্দার শহরে ৮ লক্ষ বাড়ি রয়েছে পুরসভার নথি অনুযায়ী। পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এই ফর্মের একটি করে কপি কলকাতা পুলিশের কাছে পাঠাবে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, এত অল্প সংখ্যক তথ্য আশায় তারাও রীতিমতো আশা ভঙ্গ হয়েছেন নাগরিকদের সচেতনতা নিয়ে। বছরখানেক আগে নিউটাউনে গুলি কাণ্ডে ভিন রাজ্য অথবা বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাসিন্দাদের কলকাতায় বাড়ি ভাড়া করে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের নথিবদ্ধ ঠিকমত না থাকায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়ে। এমনকি মাঝখানেক আগে দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর থেকে বেশ কয়েকজন জঙ্গি ধরা পড়ে। কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স তদন্ত করতে গিয়ে দেখে, ভুয়ো নথি দিয়ে ওই জঙ্গিরা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিল। এমনকি, তাদের আরও সাগরেদ কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে বাড়ি ভাড়া নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এমন অবস্থায় কলকাতা পুরসভা কেন এই নথি পূরণের ক্ষেত্রে নাগরিকদের ব্যাপারে কড়া অবস্থান নিচ্ছে না সেটা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সচেতন নাগরিকদের কথায়, শুধুমাত্র আবেদন-নিবেদন এ এই শহরে কোন কিছু হয় না। কড়া অবস্থান না নিলে কোন বাড়িওয়ালা তাদের ভাড়াটিয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেশ করবেন না।
পুরসভার রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকদের কথায়, এ-৭৫ ফর্ম অনলাইনে পূরণ করতে হয়। সেই ফর্ম পূরণ হওয়ার পর বরো স্তরে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় ভাড়াটিয়া আদতে রয়েছে না উঠে গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। তারপরই সেই সম্পত্তি মূল্যায়ণ করে বিল পাঠানো হবে। কোনও ব্যক্তি নিজের বাড়িতে ভাড়াটিয়া বসাচ্ছেন কিনা তার ওপরেও পুরো বিষয়টা ঠিক হবে। ওই ফর্ম পূরণ করে অনলাইনে জমা দিতে হয়। তারপর আবার কর নির্ধারণ হয়ে থাকে। ভাড়াটিয়া উঠে গেলে আবারও অনলাইনে বিষয়টি জানানো হলে বর্ধিত কর কমিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বাইরের রাজ্য অথবা অন্য জেলা থেকে কলকাতায় এসে থাকছেন বা কতজন আসছেন বা কী করতেই আসছেন, এই তথ্যগুলি সহজেই অনলাইনে নথিবদ্ধ রাখার সম্ভবপর হয়। কিন্তু নাগরিকরা সেই তথ্য জমা দিচ্ছে না বলেই কলকাতা পুরসভার শীর্ষ কর্তারা জানিয়েছেন। বর্তমানে কলকাতায় পড়াশোনার জন্য এবং কর্মসংস্থানের জন্য বহু মানুষ এই এলাকায় এসে পেইং গেস্ট অথবা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকাথাকি করছেন। একইসঙ্গে একাধিকবার বাড়িও তৈরি হয়েছে। তৈরি হয়েছে বহুসংখ্যক বহুতল। কিন্তু সেই বাড়ি বা ফ্ল্যাট বাড়িতে কারা ভাড়াটে হিসেবে থাকছেন তা বাড়িওয়ালাদের জানানোর বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না তারা। ফলে বিপদ যদি ঘনিয়ে আসে তাহলে বড়সড় বিপত্তি হবার আশঙ্কা করছেন কলকাতা পুরসভার আধিকারিকরা।