কলকাতা : কলকাতার (Kolkata) নীচেই পাতা রয়েছে মারণ ফাঁদ। যার পোশাকি নাম ইয়োসিন হিঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন শহরের নীচে সাড়ে চার কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে এই ‘গ্র্যাভিটি ফল্ট’৷ ছোটখাটো কম্পনই এই ইওসিন রেঞ্জে বড় ধাক্কা দিতে পারে। যার ফলে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা সবসময় রয়েছে তিলোত্তমার বুকে। এ ছড়াও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে খড়গপুর আইআইটি-র (Kharagpur IIT) গবেষণাতেও।
আইআইটি খড়গপুরের বিশেষজ্ঞদের ৪ বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কলকাতা নরম পলিমাটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। গোদা বাংলায় বললে ভিত খুবই পলকা। বালি, কাদামাটি, পলি এবং পচা গাছপালার এই স্তরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মাঝখানে রয়েছে জলরাশি রয়েছে। যার মধ্যে অনেকগুলি খুব অগভীর এবং পৃষ্ঠ থেকে এক থেকে সাত মিটারের মধ্যে অবস্থিত। মাটির নীচেটা যে কত গোলমেলে তার সাক্ষী বৌবাজারই। পাশাপাশি গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। কারণ হিসেবে উঠে আসছে হু হু করে জলস্তর নেমে যাওয়া, জলা বুজিয়ে বহুতল, ভূমিকম্পের কথা মাথায় না রেখে একের পর এক বহুতল তৈরির মতো সমস্যা। সমীক্ষা বলছে, মাত্র ৭% বাড়ি তৈরি হয়েছে নিয়ম মেনে। পুরোনো বাড়িতে রেট্রোফিটিংয়ের কোনও বন্দোবস্তই নেই। ভূমিকম্প হলে দৌড়ে নিরাপদে পৌঁছনোর জায়গাও প্রায় নেই।
ভূ-বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজারহাট-নিউ টাউনে এলাকায় জলাভূমি ভরাট করে ব্যাঙের ছাতা মতো গড়ে উঠেছে বহুতল। ফলে ভূস্তরে কম্পন হলে জল উঠে মাটিকে নরম করে দেবে। তাতে আলগা হয়ে পড়বে বহুতলের ভিত। ফলে বহুতলগুলি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা যথেষ্ট। যদিও এ বিষয়ে রাজ্যের রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, আইন খুব কড়া আছে। কিন্তু মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
গত দশ বছরে একাধিকবার কেঁপে উঠেছে বাংলার নীচের মাটি। ২০১৩-য় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কম্পনের মাত্রা ছিল ৪.১। ২০১৮-য় হুগলির গোঘাটে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫। ২০১৯-এর মে মাসে বাঁকুড়ার ছাতনায় ৪ দশমিক ৮। ওই বছরের জুলাইয়ে পুরুয়িলার কেন্দায় কম্পন ধরা পড়ে রিখটার স্কেলে ৪। প্রশ্ন এখন একটাই। আমজনতা বা প্রশাসন সবটাই ভাগ্যের ওপর দিয়ে বিপদের প্রহর গুনব? নাকি যার যা ন্যূনতম কর্তব্য সেগুলো পালন করব? একটু হলেও পায়ের নীচে মাটিকে যদি স্থির রাখতে পারি, তাতেই লাভ নয় কি?