কলকাতা: পাঁচতারা বিশ্ববিদ্যালয়! অথচ নেই কোনও সিসিটিভি। কেন? প্রশ্ন উঠছেই। কারণ পড়ুয়া মৃত্যুর পর থেকেই তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। একাংশের মতে সিসিটিভি-র নজরদারি থাকলে হয়ত কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা আটকানো যেন। কিন্তু এই মৃত্যুর পরও কি শিখবে যাদবপুর? জানা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের একাংশের এখনও আপত্তি রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে। কারণ তাঁদের মুক্ত চিন্তায় হস্তক্ষেপ করা হবে। তবে একাংশ শিক্ষাবিদের মতে রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভি বসলে যাদবপুরের কীসের অসুবিধা?
এখনও ক্যাম্পাস ঘুরলে এদিক-ওদিক দেখা মিলেছে মদের বোতলের। পড়ে রয়েছে নেশার সামগ্রী। কোনও আড়াল নেই। ফলত, ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, মদের বোতল-নেশা যাতে কোনওভাবেই বন্ধ না হয় সেই বিষয়টি আটকাতেই সিসি ক্যামেরায় এত অনীহা?
SFI নেত্রী শিল্পী আফরিন বলেছেন, “অপরাধকে ঠেকানোর জন্য ক্যাম্পাসে যা যা গঠনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেগুলো আমরা অবশ্যই করছি। কিন্তু আমরা সিসিটিভি বসানোর বিরোধিতা করি। একজন পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। তার জন্য অপরাধীরা শাস্তি পাক। কিন্তু তদন্তের মোড় ঘোরাতে যেভাবে আমাদের উপর নজরদারি রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে তার নিন্দা জানাই।”
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া বলেন, “আমাদের তো কোনও সমস্যা হয় না সিসিটিভি ক্যামেরায়। উল্টে সুবিধা হয়। আমরা হস্টেলে সুরক্ষিত। সেখানে সুপারদের সারপ্রাইজ ভিজিট হয়।”
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী চট্টোপাধ্যায় bnsv সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো যেখানে সুপ্রিম কোর্ট বাধ্য়তামূলক করে দিয়েছে সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনও নজরজারি। এক সময় বর্তমান রেজিস্ট্রার চেষ্টা করেছিলেন সিসিটিভি লাগাতে। কিন্তু পড়ুয়ারা তাঁকে হেনস্থা করেছিলেন। এখানে দাদাগিরি চলে।
বিজেপি নেতা শঙ্খু দেব পণ্ডা বলেন, “হস্টেলে অনেক বাবা আছে। সেই বাবাদের বাবা নেই। সেই বাবারা আরবান নাকশাল। তাঁরা উপদ্রুত অঞ্চল বানিয়ে যাদবপুরকে ব্যবহার করেন। সেই কারণে চিঠি লেখানোর অভিযোগ উঠেছিল। আমি সরাসরি বলছি ‘হোক কলরব’ হয়েছিল যাতে আদালতের নির্দেশের পরও এখানে সিসিটিভি বসানো না হয়। এখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হয়।”
উল্লেখ্য, সিসিটিভি না থাকার রোগ যাদবপুরের আজকের নয়। প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেছেন, তিনি উপাচার্য থাকাকালীন একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছিলাম যাতে পড়ুয়াদের সুরক্ষা বজায় থাকে। তার মধ্যে ছিল সিসিটিভি বসানো, বহিরাগত প্রবেশ বন্ধ করা, ক্যাম্পাসের মধ্যে মদ-গাঁজা সব বন্ধ করা, প্রতিটি হস্টেলে নজরদারি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে অপদস্ত করা হয়। হোক কলরবের মতো আন্দোলন করা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। প্রাক্তন উপাচার্য আক্ষেপ করে বলেন,”সেই সময় কর্তৃপক্ষ যদি পদক্ষেপ করত, ছাত্রনেতারা এই কাজগুলো থেকে বিরত থাকতেন তাহলে এই কাণ্ড ঘটত না।”