কলকাতা: ভোট বড় বালাই। তাই ভোটের মুখে ভবানীপুরে জল জমতে দেওয়া যাবে না। যদি জমা জলের চাপে বিশ্বস্ত ভোটাররাও মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর নির্বাচনী প্রচারেও তো বেরোতে হবে। তাই রাতারাতি জল নেমে গেল একবালপুর সুধীর বোস রোড থেকে।
অথচ এমন জলমগ্ন দশা শহরের আরও একাধিক এলাকায়। একবালপুরের থেকে রাতারাতি জমা জল সরানোর কাজ অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু শহরের আরও একাধিক এলাকায় অবস্থা আরও শোচনীয়। সেগুলির দিকে কি হেলদোল রয়েছে রাজ্যের?
মুখ্যমন্ত্রী যখন একবালপুরে বক্তব্য রাখছেন, তখন দক্ষিণ দমদমের বান্ধবনগরে প্রদীপ চক্রবর্তীর বাড়ির সামনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই কিশোরীর মৃত্যু হল। বয়স ১১-১২ বছরের আশেপাশে। জলমগ্ন রাস্তায় পাশ দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় ভারসাম্য রাখতে না পেরে বাতিস্তম্ভে হাত দিলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় দু’জনের।
গতরাতে খড়দহে জমা জলে একই পরিবারে ৩ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। অথচ এই সব কোনওকিছুতেই কোনও নজর নেই রাজ্য প্রশাসনের। কেন? এসব এলাকায় ভোট নেই! তাই কি এই অবহেলা? আর ভবানীপুরে ভোট রয়েছে বলেই কি রাতারাতি পাম্প চালিয়ে জল নিকাশের ব্যবস্থা?
আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও সেই কথা আবারও শোনা গেল। জমে থাকা জল নিয়ে যে মানুষের মনের মধ্যে ক্ষোভে যতটা সম্ভব প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা। বললেন, “কাল সকালে ববি (ফিরহাদ হাকিম) আমাকে একবালপুরের অবস্থার কথা বলল। জল জমে রয়েছে। আমি জানি এখানে কিছু সমস্যা রয়েছে। ফিরহাদকে বললাম, আমি আমফানের সময় এখানে এসেছিলাম। তখনও একই সমস্যা হয়েছিল। এই সমস্যা দূর করতে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”
পাশাপাশি এই প্রশ্নটাও উঠতে শুরু করেছে, মুখ্যমন্ত্রী যদি একবালপুর এলাকার জল যন্ত্রণার কথা আগে থেকেই জেনে থাকেন, যদি সত্যিই আমফানের সময় থেকেই জেনে থাকেন, তাহলে এতদিন কেন ব্যবস্থা নেননি। আর এখন ভোটের মুখেই কেন এই প্রতিশ্রুতি? শুধুই কি ভোটের গিমিক? উঠছে প্রশ্ন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আর মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই আশ্বাস বাণীর পর তার খুব স্বাভাবিক প্রতিফলন দেখা যাবে ভবানীপুরের ভোটব্যাঙ্কে। শুধুমাত্র ভোটের কথা মাথায় রেখেই কি তাহলে, এই জল-যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আশ্বাস?
গতকাল একবালপুরের সুধীর বোস রোডে সভা করার কথা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু নাগাড়ে বৃষ্টি আর জমে থাকা জলের কারণে গতকাল সেই সভা করা যায়নি। কিন্তু সুধীর বোস রোডের থেকে জল বের করতে বিশেষ তৎপরতা দেখা গেল পৌর নিগমের। রাতারাতি পাম্প বসিয়ে জল বের করা হয়। জল নিকাশের কাজ খতিয়ে দেখতে উপস্থিত ছিলেন খোদ ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু কলকাতার বাকি জায়গাগুলি? কলকাতার বিটি রোডের বড় অংশ এখনও জলমগ্ন। জল জমে রয়েছে টালা, দমদম, বরানগর , চিত্পুর, বাগবাজার, শ্যামবাজার, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের বিভিন্ন অংশে।
আরও পড়ুন : Bhabanipur By-Election: ‘আপনার একটা ভোট না পেলে ক্ষতি হয়ে যাবে আমার’, স্নায়ুর চাপে ভুগছেন মমতা?