কমলেশ চৌধুরী: প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে। আর ক’দিন পরই ভালবাসায় ভাসবে বাঙালি। একেবারে জোড়া প্রেমের লগ্ন। রবিবার ভ্যালেন্টাইন্স ডে। মাঝে একদিনের বিরতি। তার পরই মঙ্গলবার সরস্বতী পুজো। এমন অমৃতযোগের মুখেই কি না শীতের (Winter) সঙ্গে বিচ্ছেদ! মনোরম আবহাওয়ার বালাই নেই, উল্টে উত্তাপ ছড়াবে রোদ। হাওয়া অফিস স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে, এ বারের মতো কলকাতায় (Kolkata) শীতের পালা শেষ।
শুক্রবারের কথাই ধরা যাক। সকালে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছে ১৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বৃহস্পতিবার ছিল ১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় তিন ডিগ্রির লাফ পারদের। লাফ দিচ্ছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদও। শুক্রবার আলিপুরের তাপমাত্রা উঠে যায় ৩০.১ ডিগ্রিতে। পূর্বাভাস বলছে, সরস্বতী পুজোর মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির আশপাশে পৌঁছে যেতে পারে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠতে পারে ৩১ ডিগ্রির আশপাশে। বোঝাই যাচ্ছে, ঠান্ডার ছিটেফোঁটাও থাকবে না আর। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “কলকাতা থেকে শীতের বিদায় বলা যায়। ভোরে যদিওবা একটু ঠান্ডা অনুভূতি থাকে, বেলা বাড়লেই সেটা আর পাওয়া যাবে না। ফলে গায়ে গরম জামা না রাখাই ভালো।” পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে রাতের দিকে ঠান্ডা আমেজ থাকবে। আর উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় শীত থাকবে আরও কিছু দিন, আপাতত পূর্বাভাস এমনই।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে এ বার জমিয়ে ঠান্ডা পড়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে এত ঠান্ডা ১৩ বছরে এ বারই প্রথম পেয়েছে কলকাতা। বিশেষত, জানুয়ারি মাসে হাপিত্যেশ করে বসে থেকেও যে ঠান্ডা পাওয়া যায়নি, তার দেখা মিলছে ফেব্রুয়ারিতে। জানুয়ারিতে একেবারে শেষ দিনে শীতলতম দিন পেয়েছিল কলকাতা। তাপমাত্রা নেমেছিল ১২.১ ডিগ্রিতে। সেখানে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনেই পারদ নেমে যায় ১১.৪ ডিগ্রিতে। টানা তিন দিন পারদ ছিল বারোর নীচে।
কিন্তু মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই পৌঁছেই সব ভোঁ ভাঁ। কোথায় ঠান্ডা! আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়েছিল, ১০ ফেব্রুয়ারির পর থেকে ঠান্ডা কমবে। শীত পাততাড়ি গোটাবে কলকাতা থেকে। বাস্তবেও হল ঠিক তাই। এখন নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যাচ্ছে, বাঙালির প্রেমের লগ্নে এ বার আর শীত নয়, সঙ্গী হবে অস্বস্তির গরমই!
আরও পড়ুন: West Bengal Bandh Live Updates: পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবে বামেরা
এর মূলত দু’টি কারণ। নতুন পশ্চিমি ঝঞ্ঝা ঢোকার ফলে উত্তুরে হাওয়া দুর্বল হয়েছে। সেই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয়ের জন্য জলীয় বাষ্প ঢুকছে। অর্থাৎ, সমুদ্রের দিক থেকে ঢুকে আসছে দখিনা বা দখিনা-পুবালি বাতাস। সব মিলিয়ে শীতের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি। আবহবিদরা জানিয়েছেন, এ বার ধীরে ধীরে ছোটনাগপুর অঞ্চলের মাটি তেতে উঠবে। পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্পের জোগান পেলেই দানা বাঁধবে কালবৈশাখী। তবে আপাতত তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। জলীয় বাষ্পের জন্য দক্ষিণবঙ্গের সকাল কুয়াশামাখা হতে পারে, সতর্কতা আবহাওয়া দফতরের।