পরিবেশে যেমন ধুলো, ধোঁয়া, দূষণ বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ত্বকের রোগ। ত্বকের উপর ব্রণ-ফুস্কুড়ি, বলিরেখা এবং কালো দাগ দেখা দেওয়ার পিছনে পরিবেশের দূষণের পাশাপাশি কিন্তু খাদ্যাভ্যাস, অলস জীবনশৈলী, মেকআপ এবং হর্মোনের ভারসাম্যের অভাবও দায়ী থাকে। খেয়াল করলেই বুঝবেন, আমাদের ত্বকের রোমকূপে অহরহ জমছে তেল, ধুলো, মৃত ত্বকের কোষ। সময়ে পরিষ্কার না করলে রোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। সংক্রমণ শুরু হয় ও সেখান থকে বেরতে থাকে হোয়াইট হেডস। মুখের সৌন্দর্যহানি ঘটায় হোয়াইট হেডস।
সবচাইতে বড় ব্যাপার হল, সহজে মুক্তিও মেলে না এই সমস্যা থেকে। বাজারে বহু ক্লিনজার ও ক্রিম আছে যেগুলি হোয়াইট হেডস-এর সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় বলে দাবি করে। তবে কৃত্রিম এবং রাসায়নিকযুক্ত এই পণ্যগুলির বারংবার ব্যবহারে ত্বক রুক্ষ হয়ে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই হোয়াইট হেডস তাড়াতে বাজারচলতি সিন্থেটিক প্রোডাক্ট নয়, বরং ব্যবহার করুন প্রাচীন এবং ভরসাযোগ্য ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি। হোয়াইড হেডস-এর সমস্যা দূর করার সঙ্গে ত্বকেও বাড়তি লাবণ্য আনতে সাহায্য করে ঘরোয়া ফেসপ্যাক।
হলুদ ও মধুর ফেসপ্যাক
আয়ুর্বেদে হলুদ হল একাধিক ঔষধিগুণযুক্ত গুপ্তধন! কয়েক শতাব্দী ধরে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। হলুদের প্রলেপে মুখের মৃতকোষ ঝরে যায়। এই ভেষজের রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ। ফলে ত্বকে বাসা বেঁধে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াও নষ্ট করে হলুদ। আবার মধু ও হলুদ একত্রে নিয়ে লেই তৈরি করে মুখে মাখলে হোয়াইট হেডস-এর সমস্যা তো মেটেই সঙ্গে মুখ হয় উজ্জ্বল। এক্ষেত্রে ১ চা চামচ মধুর সঙ্গে অর্ধেক চা চামচ হলুদগুঁড়ো মিশিয়ে মুখে মাখুন। ১৫ মিনিট পর ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। তবে প্রলেপ লাগানো অবস্থায় রোদে বেরবেন না যেন।
চিনি, মধু, পাতিলেবুর রসের প্যাক
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান রয়েছে মধুতে। অন্যদিকে চিনির রয়েছে ময়লা পরিষ্কার করার ক্ষমতা। আবার, পাতিলেবুর রসে আছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা হোয়াইড হেডগুলিকে ত্বক থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। চিনি-মধু-লেবুর রসের এই ফেসপ্যাক তৈরির জন্য দরকার ১ চামচ মধু, ১ চামচ চিনি। চিনি ও মধু প্রথমে ভালো করে মেশাতে হবে। এই মিশ্রণে যোগ করতে হবে কয়েকফোঁটা লেবুর রস। এই মিশ্রণ প্রয়োগ করুন হোয়াইট হেডস-এর জায়গায়। এই অবস্থায় ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ঈষদুষ্ণ জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
বেকিং সোডা ফেস প্যাক
শুধু কেক বানাতে আর রান্নাতেই বেকিং সোডা ব্যবহার হয় না, এমনকী ত্বকের ওপরও রয়েছে বেকিং সোডার বিশেষ প্রভাব। ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করে বেকিং সোডা। রোমকূপ পরিষ্কার করে কূপের মুখ খুলে দিতে পারে এই উপাদানটি। ত্বক থেকে হোয়াইট হেডস বের করে দেওয়ার জন্য ২ থেকে ৩ চামচ বেকিং সোডা এবং তার উপরে ২ থেকে ৩ ফোঁটা জল দিন। এবার জল ও বেকিংসোডার এই মিশ্রণ সরাসরি প্রয়োগ করুন হোয়াইট হেডস-এর উপর। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। পার্থক্যটা দেখে নিন আয়নায়।
ওটমিল ও মধুর প্যাক
মুখমণ্ডল থেকে পুরনো ও মৃত কোষ সরিয়ে ফেলতে ওটমিল-এর জুড়ি নেই। আবার মধুর রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ যা মুখমণ্ডলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। ওতএব ওটমিল আর মধুর যুগলবন্দি যে মুখকে ঝলমলিয়ে দেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ওটমিল এবং মধুর প্যাক তৈরির জন্য ১ চা চামচ ওটমিলের সঙ্গে মেশান ২ চা চামচ মধু। এই মিশ্রণ সরাসরি হোয়াইট হেডস-এর উপরে লাগান। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন মুখ। পেয়ে যান ঝকঝকে ত্বক।
ডিম-মধু ফেস প্যাক
মুখ থেকে কুৎসিত হোয়াইট হেডস বিতারণের জন্য ডিম এবং মধুর মিশ্রণ দিতে পারে আশ্চর্য ফলাফল। প্রথমে একটি ডিমের সাদা অংশ আলাদা করুন। তার মধ্যে যোগ করুন এক চামচ মধু। ভালো করে ফেটান। মুখের ওপর এই মিশ্রণের প্রলেপ দিন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।