গ্রীষ্ম মানেই দরদরিয়ে ঘাম বেরনো! ফলে যতই সাবান মাখা হোক না বা ডিও ব্যবহার করা হোক, গা থেকে ঘামের টকটক গন্ধ (Body Odour) বেরবেই! আর যাঁদের একটু বেশি ঘাম হয় তাঁরা তো সর্বক্ষণ শঙ্কায় ভোগেন, এই বুঝি ঘামের গন্ধে পাশ থেকে লোক পালালো! আসলে ঘামে থাকে বিশেষ প্রোটিন। আর ত্বকে থাকে কিছু ব্যাকটেরিয়া। ক্ষুদ্র জীবাণুগুলি ওই প্রোটিনকে ভেঙে বিশেষ অ্যাসিডে রূপান্তারিত করে যার থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই এহেন কটু গন্ধ এড়াতে গায়ে, বগলে গ্যালন গ্যালন মহার্ঘ ডিওড্রেন্ট ব্যবহার করেন। অথচ ডিওড্রেন্টে থাকা নানা ধরনের রাসায়নিক ত্বকের পক্ষে খুব একটা সুবিধাজনক নয়। অথচ জানলে অবাক হবেন, সামান্য কতকগুলি ঘরোয়া ভেষজের (home remedies) অনায়াস ব্যবহারেই ঘামের গন্ধ দূর করা যায়। শরীর জুড়ে খেলা করে সুগন্ধ। দেখা যাক সেগুলি কী কী—
বেকিং সোডা
প্রথমে ১ চামচ বেকিং সোডা নিয়ে জলে গুলে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণ প্রয়োগ করুন বগলের তলায়। ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে বগল ধুয়ে ফেলুন। বেকিং সোডা ক্ষারীয় গুণযুক্ত। বেকিং সোডা দুর্গন্ধ উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস। এছাড়া ত্বকের আর্দ্র ভাব ধরে রাখে ও বেশি ঘাম হওয়া রোধ করে। ফলে দুর্গন্ধও দূর হয়।
মৌরি বীজ
এককাপ মৌরি গুঁড়ো নিন। অনেকখানি জল মেশান। এবার মৌরিসুদ্ধ জল ফোটান কিছুক্ষণ। ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে জল আলাদা করুন। ঠান্ডা হলে পান করুন। মৌরি জল পান করলে হজম ক্ষমতা বাড়ে। পেট ভালো থাকে। শরীর ঠান্ডা থাকে। ঘাম কম হয়। দুর্গন্ধও দূরে থাকে।
মেথি চা
২৫০ মিলিলিটার জলে ১ চা চামচ মেথিগুঁড়ো দিন। জল ফোটান ও ফুটিয়ে অর্ধেক করুন। ঠান্ডা হলে খালি পেটে পান করুন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পূর্ণ এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন মেথি চা পান করলেই শরীর থেকে নানা ক্ষতিকর পদার্থ (টক্সিন) বেরিয়ে যেতে থাকে। দবরে রাখে ত্বকের নানা সংক্রমণ। ফলে ত্বকের দুর্গন্ধও দূরে রাখে।
লেবুর রস
এক বাটি জলে একটি পাতিলেবুর রস মেশান। ওই রস দিয়ে বগল ধুয়ে ফেলতে পারেন। এছাড়া ত্বক খুব সংবেদনশীল না হলে বগলে সরাসরি পাতিলেবুর রসের প্রলেপ দিয়ে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন। লেবুর রস অম্লধর্মী যা ত্বকের পিএইচ লেভেল কমিয়ে দেয়। তাই ত্বকে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে না।
নিম পাতা
একমুঠো নিম পাতা ও অল্প জল নিয়ে ভালো করে নিমপাতার পেস্ট তৈরি করুন। ওই পেস্ট-এর প্রলেপ দিন শরীরের ঘাম প্রবণ অংশে। প্রলেপ শুকিয়ে গেলে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিম পাতায় অ্যান্টিফ্যাঙ্গাল, অ্যান্টিসেপটিক উপাদান রয়েছে। তাই নিম পাতা সমস্তরকম খারাপ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে যা দুর্গন্ধ তৈরি করতে পারে।
গোলাপ জল
২ থেকে ৩ চা চামচ গোলাপজলের সঙ্গে ১ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মেশান। বগলে দিন ওই মিশ্রণের প্রলেপ। গোলাপ জল শরীরে একধরনের সুগন্ধ ছেড়ে যায়। একইসঙ্গে গোলাপ জলে থাকা বিশেষ উপাদান রোমকূপের মুখ সামান্য হলেও ছোট করে। ফলে ঘাম কম বেরয়। আরও ভালো ফলাফলের জন্য গোলাপ জলের সঙ্গে ভিনিগার মেশানো যেতে পারে।
তাহলে আর দেরি না করে গায়ের দুর্গন্ধ এড়াতে প্রয়োগ করুন ভেষজ উপায়। বাড়ির বাইরে বেরন নিশ্চিন্তে। আশপাশে বিশেষ কেউ দাঁড়ালে সে নিশ্চিতভাবে আপনাকে এড়াতে পারবে না। কারণ মনে করা হয়, প্রত্যেক ব্যক্তিরই আলাদা ধরনের গন্ধ থাকে যা তার প্রতি বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করে!
আরও পড়ুন: Reetha for Healthy Hair: শুধু জেল্লা নয়, মজবুত ও ঘন চুল চাই? চুলের যত্নে রিঠার রয়েছে অনেক গুণ