বর্ষায় অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও ঘামের কারণে মাথার ত্বকে খুশকির প্রবণতা বাড়তে পারে। যার ফলে চুলকানি, তৈলাক্ত মাথার ত্বকের সমস্যা বাড়ে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত আর্দ্রতা চুলের গোড়া নরম করে অকালে চুল ঝরিয়ে ফেলে ও ডিহাইড্রেট করে তুলতে পারে। এরজন্য চাই ডিপ কন্ডিশনিং। চুলের গোড়া মজবুত করে পরিবেশের সব বাধা অতিক্রম করে তুলে একটি স্বাস্থ্যকর ও সুরভিত চুলের জন্য বাজারচলতি শ্যাম্পু বা হেয়ার মাস্ক লাগবে না। চুলের বৃদ্ধি ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য চাই সঠিক আয়ুর্বেদিক উপায়। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়ুর্বেদ চুল পড়া শরীরের ঘাটতিবা বিভিন্ন সমস্যার কারণ। তাই চুল পড়াকে কখনও অবহেলা করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে আয়ুর্বেদের লক্ষ্য হল শুদ্ধিকরণ থেরাপা, শমনা বা শান্তকরণ থেরাপি ও খাদ্যতালিকা-জীবনধারায় পরিনর্তন এনে চুল পড়াকে প্রতিরোধ করা।
ব্রাহ্মী, শঙ্খপুষ্পী, ভৃঙ্গরাজ, আমলা, গুডুচি, তপিয়াদি লাউ, যষ্টিমধু এবং শঙ্খভস্মের মতো ভেষজগুলি চুলের দোষ ও ভারসাম্যগুলিকে বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাডা ফলকলের শক্তি বাড়াতে ও সার্বিক মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য আয়ু্বেদ ভেষজের গুণের কোনও শেষ নেই।
শুধুমাত্র তেল বা শ্যাম্পুর মত পণ্যে দিয়ে নয়, চুলের স্বাস্থ্য ও চুলের বৃদ্ধির জন্য আয়ুর্বেদিক ভেষজ ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের মত কাজ হবে। স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য শুধু চুলেই নয়, হজম শক্তি বৃদ্ধির দিকেও নজর দেওয়া উচিত। যেমন আমলা চুলের বৃদ্ধির জন্য দারুণ উপাদান। তাই মাথার ত্বকে নয়, প্রতিদিন নিয়ম করে খেলে চুল যেমন বৃদ্ধি হয়, তেমন চুলের স্বাস্থ্যও দেখার মত। এছাডা গরম জলে আমলা গুঁড়ো মিশ্য়ে দুপুরের খাবারের আগে পান করতে পারেন। ঘিয়ের সঙ্গে আমলার গুলি খেতে পারেন। তাতে চুলের বৃদ্ধির সঙ্গে চুলের গুণের মানও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
আমলা- আমলা বা আমলকি হল ভিটামিন সি-এর ভাঁড়ার। এ ছাড়াও তা নানাভাবে শরীর ভালো রাখে। কিন্তু জানেন কি, আমলকি মাখলে চুলের গোড়া মজবুত হয়, চুলে বাড়তি চমক লাগে। আমলকির তেল মাথায় মাখলে চুলের গোড়া মজবুত হয়, চুলের অকালপক্বতা কমে, চুল লম্বাও হয় তাড়াতাড়ি। আমলার এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড আর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট চুলের টেক্সচারও সুন্দর করে তুলতে পারে।
ভৃঙ্গরাজ- চুলের যত্নে যতরকম আয়ুর্বেদিক সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভৃঙ্গরাজ। প্রতিদিন চুলের গোড়ায় ভৃঙ্গরাজ তেল মালিশ করলে চুল ঘন হয় আর লম্বাও হয় দ্রুত। যে সব মেয়ের চুল উঠছে বা চুল পাতলা হয়ে গেছে, তাঁরা ভৃঙ্গরাজ মাখলে উপকার পাবেন। গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত চুল সুস্থ সুন্দর রাখতে জুড়ি নেই ভৃঙ্গরাজের।
নিমপাতা: চুল পড়া রোধে একটি কার্যকরী আয়ুর্বেদিক সমাধান দিতে পারে নিমপাতা। নিয়মিত নিমপাতা ব্যবহারে চুলের গোড়া শক্ত করে এবং মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটায়। খুশকি, উকুন, রুক্ষতা বা খোসপাঁচড়া এসব সমস্যায় বেশ কার্যকরী নিমপাতা। নিমপাতা পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া পানিতে নিমপাতা সেদ্ধ করতে পারেন। ঠান্ডা হয়ে গেলে পরিষ্কার চুল এতে ভেজাতে পারেন। সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহারেই কার্যকরী ফল দেখতে পাবেন।
শিকাকাই: চুলের জন্য এই ফল। পানিতে মেশালে ফেনা তৈরি হবে। আয়ুর্বেদিক শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য এবং চুলপড়া রোধে বেশ কার্যকরী। এটি ব্যবহারে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল উঠে যায় না। শিকাকাই পাউডার সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। চুল পরিষ্কারে এটি ব্যবহার করুন। রিঠার মতোই এটি চুলে ব্যবহার করুন। একদিন পর পর ব্যবহার করুন; পার্থক্যটা নিজেই বুঝতে পারবেন।